‘জনগণের রক্ত চুষে বড়লোক নয়’ চুয়েটের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির সময়োপযোগী ভাষণ

101

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রতিষ্ঠানটির চ্যান্সেলর হিসাবে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন। একজন স্বজ্জন, সৎ ও মানবিক অধিকন্তু রসিক মানুষ হিসাবে দেশের আমজনতার কাছে তাঁর স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি রয়েছে। রয়েছে ব্যাপক গ্রহণীয়তা। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি মানেই তারুণ্যের মনে উচ্ছ্বাসের একচিলতে ধমকা হাওয়া। ফলে অধির আগ্রহে স্রোতার কাতার কিংপতন শব্দশূণ্য হয়ে অপেক্ষা থাকে কখন দেশের অভিভাবক, সর্বোচ্চ সন্মানিত মানুষটি বক্তব্য দিতে ডায়াসে উঠবেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানও এর ব্যতিক্রম ছিল না। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যথাসময়ে ভাষণ দিলেন; আর দেশ, জাতির, উন্নয়ন ও সংকটের কথার পাশাপাশি অট্টহাসির জোয়ারও বয়ে দিলেন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছিল ব্যবসায়ীদের উদ্যেশ্যে। যা এ সময়ের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমাদের মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন, “ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনগণের রক্ত শুষে রাতারাতি ধনী বনে যাওয়া অসৎ ব্যবসায়ী, মজুদদার ও মুনাফাখোরদের সঠিক পথে আনতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও স্নাতক ডিগ্রিলাভকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহব্বান জানিয়েছে। অসৎ ব্যবাসয়ী, মজুদদার ও মুনাফালোভীদের মানসিকতার পরিবর্তন আবশ্যক। আপনাদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ দায়িত্ব পালন করতে হবে”। একইসাথে রাষ্ট্রপতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, একশ্রেণির লোকের ভুয়া সংকট তৈরি করে এবং গুজব ছড়িয়ে পেঁয়াজ ও চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে এবং খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের মতো ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে ও ভেজাল দিয়ে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ‘এটি একটি অদ্ভুত দেশ’ মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একদিকে ধান উঠছে, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে হাহাকার করছেন। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ধান চাল মজুদ করে কেজিতে ৪-৫ টাকা করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট মহলকে এই অশুভ কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করার আহব্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সমাবর্তনের ভাসণে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক নেতাদের উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এসব মজুদদারদের সঠিক পথে আনা অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যথার্থ, সময়োপযোগী, বাস্তবধর্মী। তাঁর এ বক্তব্য সমাজের ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতারা অনুধাবন করতে পারলে জনগনের কষ্ট অনেকখানি লাঘব হবে। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মহাসড়ক আরো গতিশীল হবে। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে সরকারে বিভিন্ন ভীশন ও উন্নয়ন কার্যক্রমের কথাও তুলে ধরেন। তাঁর মতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার যে লক্ষ্য ছিল তা আজও আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ সহ শতবছর মেয়াদী ব-দ্বীপ ২১০০ পরিকল্পনা নিয়েছেন। এসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমরাও বিশ্বাস করি, শিক্ষিত তরুণরাই এ জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দিবে। প্রতিযোগিতার বিশ্বে তাদের টিকিয়ে থেকে আমাদের এ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে এর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়টি হল, নিজে সৎ হওয়। নিজের জীবনে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার অভ্যাস গড়ে তোলা।