ছাদ ও অল্প জমির জন্য বারোমাসি লাউ উদ্ভাবন

95

যুগের চাহিদা মেটাতে ছাদে ও স্বল্প জমিতে বছর জুড়ে চাষযোগ্য বিপুল ফলনের লাউয়ের জাত উদ্ভাবন করেছে গবেষকরা। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারোমাসি এ লাউ এরই মধ্যে চাষিদের মাঝে আশা জাগিয়েছে। দেশের সবজির সংকট মোকাবেলায় এ জাত ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।
সারা বছরই ফলন হওয়া স্বাদে দারুণ এ লাউ উদ্ভাবনের পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম আমিনুল ইসলামের আট বছরের সাধনা রয়েছে। দীর্ঘ গবেষণার পর লাউয়ের দুইটি জাত সৃষ্টি করেন তিনি। নতুন এ জাত দুইটির নাম দেওয়া হয়েছে- বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ ও বিইউ লাউ-১।
এ লাউ গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত প্রতিটি গিঁটে গিঁটে ফলন হয়। শুধু ফলনই নয়, এ জাত সৃষ্টিতে ভোক্তার কথাও ভাবা হয়েছে। পরিবারে লোক সংখ্যা কমে আসায় একটা প্রচলিত বড় লাউ একবারে রান্না করা সম্ভব হয় না। ফলে দেওয়া লাউয়ের অংশর স্বাদ ও গুণ কমে যায়। নতুন জাতের লাউয়ের সাইজ ছোট, তাই এতে এমন সমস্যা এড়ানো সম্ভব বলছেন গবেষকরা।
যদিও স্মার্ট কৃষিতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি জড়ানো, তবু গাজীপুরের এ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ জাতের লাউকে ‘স্মার্ট কৃষির’ জন্য উপযোগী বলছেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন মিয়া বলেন, কম জায়গায় বেশি ফলন উপযোগী এ জাত দুটো বাড়ির উঠোন বা আঙ্গিনায় এমনকি ভবনের ছাদেও সফলভাবে চাষ করা যাবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ লাউ চাষ করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে সারা বছর বাজারে বিক্রি করে স্বচ্ছল হতে পারেন।
বেশি ফলনের সুস্বাদু লাউয়ের এসব জাতের উদ্ভাবক আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, আধুনিক ও বাণিজ্যিক চাষাবাদে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ ও বিইউ লাউ-১ জাত। উচ্চফলনশীল লাউয়ের জাত দুইটির একটি হাইব্রিড, অন্যটি উন্মুক্ত পরাগায়িত (ওপি)। দুটিরই ফলনের তুলনায় অঙ্গজবৃদ্ধি খুব কম হওয়ায় ‘স্মার্ট কৃষির জন্য একেবারে লাগসই’ বলছেন তিনি।
তাছাড়াও পুং ও স্ত্রী ফুলের অনুপাত কম হওয়ায় গাছের খাদ্য প্রায় পুরোটাই ফল উৎপাদনে ব্যবহার হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এতে প্রচলিত জাতের লাউয়ের তুলনায় এ জাতে সারসহ গাছের খাদ্যের অপচয় কম হয়। আর রোগ সংক্রমণ কম হওয়ায় তুলনামূলকভাবে গাছ থেকে লাউ কম ঝরে পড়ে।
অল্প জমিতে চাষযোগ্য এ লাউ সবজির চাহিদা মেটাতে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’ বলে বিজ্ঞানীরা আস্থাশীল। চাষে কম খরচের এসব জাত চষে উপকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরাও। তারা বলছেন, এ লাউ পোকা মাকড়ে তেমন আক্রান্ত হয় না, অন্য লাউয়ের তুলনায় ফলন বেশি হয়।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক এলাকার কৃষক কামরুজ্জামান সবুর ১৭ শতাংশ জমিতে এ দুই জাতের লাউ চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। ওইসব গাছ এখনও ফলন দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অল্প জমিতে অল্প খরচে এ লাউয়ের ফলন অনেক বেশি। এ লাউ চাষ করে হত দরিদ্ররা সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন। খবর বিডিনিউজের
এসব জাত আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় সারা বছরই চাষ করা যায়। গ্রীষ্মকালেও এর স্বাদেও খুব একটা হেরফের হয় না বলে বলছেন এর উদ্ভাবক।
দেশি লাউ এর মতো হালকা সবুজ রঙের লাউ হয় এসব জাতেও। লাউ গাছের প্রতিটি গিঁটে গিঁটে ধরে ফল। ফলের গড় ওজন তিন থেকে চার কেজি। বিইউ লাউ-১ জাতটির ফল ছোট (১.০-১.২ কেজি)।
গবেষকরা বলছেন, আকৃতির দিক থেকে এ লাউ গাছ ছোট হওয়ায় এবং গাছের গোড়া থেকে ডগা অবদি গিঁটে গিঁটে লাউ ধরায় এটি ছাদকৃষি বা ভার্টিকাল এগ্রিকালচারে অত্যন্ত সফল হবে। বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ চার মাস অন্তর অন্তর বীজ বপন করে সারা বছর চাষাবাদ করা যায়। প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি করে লাউ ধরে। তবে বিইউ লাউ-১ জাতের বীজ লাগাতে হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। চারা উৎপাদনের ৪০-৪৫ দিন পর ফুল আসা শুরু হয়। প্রতি গাছে ২৫-৩০টি করে লাউ ধরে। কৃষক পর্যায়ে এর চাষ শুরুর খবর দিয়ে এর গবেষক বলেন, এতে সবজির উৎপাদন বহুগুণ বাড়বে বলে মনে করছি। বিএডিসির মাধ্যমে দ্রুত এ জাত দুইটি দেশে ছড়িয়ে যাবে আশা তার।