ছাত্রলীগের অবরোধে দিনভর বন্ধ শাটল

22

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘাতের পর একাংশের ডাকা লাগাতার অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঁচদফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদানের সময় এ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে অবরোধের প্রভাবে দিনভর শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এছাড়া সংঘাতের পর গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে কয়েক বস্তা পাথর-কাচের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। পরে গভীর রাতে ফের অভিযান চালিয়ে দুইপক্ষের ২০ নেতাকর্মীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ।
বিবাদমান পক্ষ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী বগিভিত্তিক উপগ্রæপ ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার-সিএফসি’ এবং শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াসের অনুসারী বগিভিত্তিক উপগ্রূপ ‘বিজয়’ এর সদস্য। উভয় পক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার ও মদদদাতা হিসেবে সভাপতি রুবেলকে দায়ী করে ছাত্রলীগ থেকে তার বহিষ্কারের দাবিতে উপগ্রূপ ‘বিজয়ের’ নেতাকর্মীরা অবরোধের ডাক দিয়েছিল।
এদিকে গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালযয়ের প্রক্টর বরাবর পাঁচদফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদানের পর অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগের এ অংশটি। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে বিজয় উপগ্রূপের কর্মীদের ওপর হামলা ও পূর্বের সকল ঘটনার ‘নির্দেশদাতা’ ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও এর সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার, রুবেলকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা এবং তার ‘ছাত্রত্বহীন ও বয়স উত্তীর্ণের’ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবগত করা, হামলায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী হল থেকে আটককৃত আট নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক উপগ্রূপ বিজয়ের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের স্বাক্ষরিত দাবিগুলোর বিষয়ে জানিয়েছেন উপগ্রূপটির কর্মী ফারদিন রায়হান ও সাহিল কবির।
তারা বলেন, ‘আমরা পাঁচদফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দিয়েছি। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই অবরোধ আগামী রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। দাবি আদায় না হলে আমরা আবারো আন্দোলনে যাবো।’
অভিযোগগুলো অস্বীকার করে সিএফসি উপগ্রূপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘এখানে মূলত সমস্যা ছাত্রলীগ ও বগিভিত্তিক সংগঠন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বগি রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বগি রাজনীতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করছে। বুধবারের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বলেছি।’
স্মারকলিপির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন করে। বুধবার সন্দেহভাজন যে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে তাদের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কারণ পূর্ণাঙ্গ সমঝোতা ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চালুর বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেলের বহিষ্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হল থেকে ঝাড়– মিছিল বের করেন প্রতিপক্ষ বিজয় উপগ্রæপের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে গেলে প্রক্টরিয়ার বডির সদস্যরা তাদের হলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকালে খেলার মাঠে কথা কাটাকাটির জেরে সিএফসি উপগ্রূপের এক কর্মীকে বিজয়ের কর্মীরা মারধর করলে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। পরে সিএফসি উপগ্রূপের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে থাকা বিজয়ের দুই কর্মীকে মারধর ও একজনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘাতের প্রস্তুতি নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ তাদের হলে ঢুকিয়ে দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপগ্রূপ সিএফসি নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহআমানত হল ও উপগ্রূপ বিজয় নিয়ন্ত্রিত সোহরাওয়ার্দী হলে পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি অভিযান চালায় প্রশাসন। এসময় কয়েক বস্তা পাথর ও কাচের বোতল উদ্ধার করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি প্রশাসন। তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহআমানত হল থেকে সিএফসি উপগ্রূপের ১২ জন ও সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বিজয় উপগ্রূপের আট জনকে আটক করেছে পুলিশ।