চ্যালেঞ্জের মুখে আমাদের অর্থনীতি

113

বৃহদায়ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ, বিরাটাকার কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত, পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখী কারণ, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা দেশের সামস্টিক অর্থনীতি (গরপৎড় ঊপড়হড়সরপ)কে শক্তিশালী পর্যায়ে দাঁড় করা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে কাঠোরমত ব্যবস্থাগ্রহণ, খেলাপী ঋণ পুনরুদ্ধারে টাক্সফোর্স গঠন করা আজ জরুরী হয়ে পড়েছে। জরুরী হয়ে পড়েছে এ জন্যে যদি আমরা উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে স্থান করে দিতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব রাজনৈতিক আসরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর আলোকে একটি স্থিতিশীল বহিঃখাত ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রেখে পর্যায়ক্রমে ঈধঢ়রঃধষ অপপড়ঁহঃ ড়ভ ইঙচ উন্মুক্তকরণের দিকে ধাবিত করে একদিকে রপ্তানি এবং নতুন নতনু পণ্য অন্তর্ভুক্ত করে আমদানি ব্যায়ের তুলনায় রপ্তানি আয়কে বৃহত্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে উন্নয়নমুখী বিনিয়োগ সহায়ক নীতি নির্ধারণ আবশ্যক। রাস্তাঘাট ও শহুরের দৃশ্যমান চাকচক্য এসব কিছু অনুৎপাদন খাত। দেশে যে সব ভোগ্য এবং আমদানি হয় সেসব আজ চিহ্নিত করে সেসব খাতের উৎপাদনে বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। ভারত গরু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খামার সৃষ্টি হয়েছে এভং পাশাপাশি গরুর দুধকে যদি প্রক্রিয়াজাত করে আমরা দুধ পাউডার শিল্প গড়ে তুলতে পারি তবে পাউডার দুধ আমরা আমদানি পন্যের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারি। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাগ্রয় হতো। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কেন বিদেশিদেরকে আহŸান করবো? আমরা যদি ৩০০০ কোটি টাকা ব্যায়ে সাটেলাইট পাঠাতে পারি আমারা ৩০০০ কোটি টাকা অর্থায়নে বিরাট প্রকল্প হাতে নিতে পারি। দেশে আজ অনেক রুগ্ন শিল্প বা মৃত শিল্প আছে ঐসব শিল্পের দায়ভার সরকারের স্কন্ধে না নিয়ে তৎ স্থলে যুগোপযোগি শিল্পে রূপান্তর আবশ্যক।
আমাদের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জের পথ ধরে চলছে। সৌদি আরবে আমাদের শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখের মতো। তারা আমাদের হতাশ গ্রস্থাবস্তায় দিন কাটাছে। বৈধ এবং অবৈধ যাকে যেখানে পাচ্ছে পেছনের দিক থেকে শার্টের কলার চেপে পুলিশরা গাড়ীতে তুলে আউট পোস্ট ক্যাম্পে নিয়ে সরাসরি বিমানে তুলে দিচ্ছে। এভাবে হরদিন সম্পূর্ণ খালি হাতে শতশত বাঙালি দেশে ফিরছে। এতে করে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো হুমকীতে পড়েছে। তা যদি চলতে থাকে আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ইস্পিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলে মনে হচ্ছেনা।
পোশাক রপ্তানিকারকেদের পক্ষ থেকে টাকার অবমূল্যায়ন করার প্রস্তাব এসেছে। আমাদের প্রতিযোগি রাষ্ট্র চীন, ভিয়েতনাম বিদেশি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে তাদের অর্থের মান হ্রাস করে রেখেছে। আমাদের রপ্তানিবৃদ্ধির লক্ষ্যে একই পথ অনুসরণ করার অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। পোশাক শিল্পের জন্য ট্যাক্সটাইল, ফেব্রিক সংগ্রহ এবং গার্মেন্টস এক্সেসরিজ সংগ্রহ করতে হয় বহিবিশ্বের বাজার থেকে। টাকার মূল্যমান গ্রাস হওয়াতে সেসব জিনিস কিনতে গেলে একই টাকায় পূর্বের চাইতে কমপরিমান দ্রব্য আমরা পাবো। অবমূল্যায়ন জনিত কারণে দেশে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাবে। সুতরাং মূদ্রাস্ফীতিতে ট্যাক দেওয়ার সম্ভব হবেনা।
শ্রমিক শ্রেণী নতুন পে স্কেল দাবি করবে। সুতরাং পোশাক উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ঈড়ংঃ গরহরসরুরহম করতে শ্রমিক কর্মচারী ছাটাই করবে। দেখা দিতে পারে কর্মহীনতা। তখন যদি রপ্তানি ধস নামে তখন বিরাট আমদানি ব্যায় মেটাতে রিজার্ভে ও ধস নামবে। তা ঠেকাতে যদি আমদানি কাঠ-সাঁট করা হয়। তবে রাজস্ব হারাবার ভয় আছে। বড়ো বড়ো ম্যাগাপ্রকল্পগুলোর জন্য বিদেশি বিনিয়োগের কারণে প্রতিবছর আমাদের দেয় কিস্তি এবং সুদের পরিধির প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এদের থেকে রেহাই পাবার পথ নেই। এদের সাথে আমাদেরকে লাইন বাঁজ করে চলতে হয়।
দেশের দ্রæত উন্নয়নে শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যের সফল পরিণতির জন্য চাই সমৃদ্ধ ও সুশৃংখল ব্যাপকভিত্তিক অর্থবাজার। অর্থবাজারের দুটো দিক (১) মূলধন বাজার (ঈধঢ়রঃধষ গধৎশবঃ) (২) মুদ্রাবাজার (গড়হবু গধৎশবঃ)
দীর্ঘমেয়াদী অর্থের যোগানদাতা হিসেবে পুঁজিবাজার শিল্প ব্যবসা বাণিজ্যে অন্যতম সহায়ক শক্তি। দেশে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ, ঋণপত্র বিক্রির মাধ্যমে (নির্দিষ্ট সুদের হারে) ঋণ সংগ্রহ করাই হচ্ছে পুঁজিবাজারের কাজ।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে শিল্প বিপ্লবের সাফল্যের পশ্চাতে মূলচালিকা শক্তিরূপে আবির্ভুত হয় এ পুঁজি বাজার এ পুঁজিবাজারকে আমরাই আমাদের হাত দিয়ে টুটি চেপে হত্যা করেছি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আহŸান করে যাচ্ছি। বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ তাদের স্বার্থ কড়াই গন্ডাই বুঝে বিনিয়োগ করতে অভ্যস্ত। ২০১৫ সালে ৩০ জুন চীন হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী ও বেজার মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে চায়না ইকোনমিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আমরা প্রতীকি মূল্যে ২৯০ একর খাস জমি তাদেরকে হস্তান্তর করেছি। ৭৭৪ একর মোট জমির মধ্যে বাকী জায়গা অধিগ্রহণের মাধ্যমে হস্তান্তর করার কথা আছে। তারা তথায় ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এখানে ফার্মাসিউটিক্যালস, গার্মেস্টস, টেলিকম, ইলেক্ট্রিক পণ্য, মেডিক্যাল ডিভাইস, আইটসহ বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিজ পণ্য উৎপাদন করবে। আমাদের প্রাপ্তি বা স্বার্থ শুধু একটা, অর্থাৎ আমাদের ৫৩০০০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এতদ্ব্যাপারে আইএলও নীতি অনুসৃত হবে কিনা জানা নেই।
দিন দিন আমাদের কর্মসংস্থানের অভাব হচ্ছে। সৌদি সরকারের এক পরিকল্পনা আছে আমাদের দেশ থেকে পর্যায়ক্রমে বিদেশি শ্রমিক ছাঁটাই করবে তৎস্থলে তাদের নিজস্ব শ্রমিকদের নিয়োগ দেবে। সাম্প্রতিক সময়ে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। যেভাবে প্রবাসীদেরকে ঝেঁটিয়ে তাড়া করছে, এতদ্ব্যাপারে কোন বাদ প্রতিবাদ করার মতো কূটনৈতিক শক্তি সামর্থ আমাদের আছে বলে মনে হয়না। এ বৃহৎ শ্রমবাজার অবশ্যই আমাদের হাত ছাড়া হবে এর বিকল্প চিন্তাধারা স্থির করা বাঞ্চনীয় আমাদের দক্ষ শ্রমিকের তীব্র অভাব। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষার মান অতি নিম্ন। সবাই কমার্স পড়তে চায়। প্রত্যেক স্কুল কলেজের প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন এনে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগত বিদ্যার সম্প্রসারণ করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, ট্যাকনেশিয়ান ম্যাকানিক, ডিজাইনার, এ ধরনের ট্রেডে কোর্স চালু করতে হবে। জাপান বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করতে চায় ৩ লক্ষ মানুষ। তারা এধরনের মানুষদের চাকুরী দিতে আগ্রহী। সৌদি শ্রম বাজারে ভারতের ৪৫ লক্ষ মানুষ কর্মরত অথচ তাদের শ্রমিক দক্ষ শ্রমিক হওয়ায় এবং শক্তিশালী কুটনৈতিক তৎপরতার কারণে তারা অযথা চাকুরী হারাচ্ছেনা। বলা যায় এ ক্ষীয়মান শ্রমবাজারের কারণে বিদেশ ফেরত বেকার লোকগুলো আমাদের ঘাড়ে বাড়তি বোঝা হিসেবে দাঁড়াবে। যে রেমিট্যান্স আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির অহংকার তা এখন ক্ষীয়মান পর্যায়ে।
গত কয়েকবছর অর্থনীতিকে প্রত্যেকটা সূচকে গতির সঞ্চার হয়ে এসেছিলো। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, আমাদের ব্যায় নির্বাহের জন্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে সক্ষমতা অর্জন, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ইতিবাচক প্রভাব, মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রা, বিদেশি রিজার্ভ। প্রয়োজনীয় এসব সূচকে ২০০৮ এর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাকালীন সময়ে অর্থনীতির গায়ে মারাত্মক কোন আঁচড় ও লাগেনি। মনে করেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের ও চীনের অর্থনৈতিক যুদ্ধে বাংলাদেশে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৈরি পোশাক এর রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু ঘটলো বিপরীত। হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে দৃশ্যমান হয় রপ্তানিতে আমরা বড়ো সড়ো মার খেয়েছি। ক্রমেই প্রতিমাসে কমছে রপ্তানি আয়। সর্বশেষ শুধু অক্টোবর ২০১৯ এর ৩০৭ কোটি ৩২ লক্ষ ডলারের পণ্যরপ্তানি হয় যা কিনা গত অক্টোবর ১৮ এর চেয়ে ১৭.১৯% কম।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর, এ চারমাসে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে রপ্তানি আয় কমেছে ১১.২১% এর মতো। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বোধ হয় সন্তোষজনক জায়গায় আমরা আর ধরে রাখতে পারবোনা। চীন রপ্তানি আয় বাড়াতে মার্কিন শুল্ক ফাঁদের দেয়াল ডিঙ্গাতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। এতে করে ২৫% শুল্ক চাপের পরও রপ্তানি আয় তারা ধরে রাখতে সক্ষম হবে। তাদের তৈরী পোশাকের প্রত্যেকটি উপাদান স্বদেশী। তাদের ১৩৬ ক্যাটাগরীর পণ্য আমাদের ক্যাটাগরী ৩২টির মতো। সুতরাং চীনকে ডিঙ্গিয়ে ১ম স্থানে অধিকার স্বপ্নাতীত বিষয়। চীন উৎপাদন ব্যায় সংকোচনের জন্য অটোমেটিক মেশিন তৈরি করেছে ২০০ শ্রমিকের কাজ ২০ জন শ্রমিক সস্পন্ন করতে পারবে। উদ্বৃত ১৮০জন অন্যক্ষেত্রে স্থানান্তর করার মতো ব্যবস্থাও করা আছে। যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমেরিকান ৬টি বাইং এলায়েন্স তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবসা করে। তাই যদি হয় আমেরিকাতে আমরা যে চীনের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বাজার যে করায়ত্ব করতে পাবো এমন কূটনৈতিক শক্তি ও সক্ষমতার যথেষ্ট অভাব। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক ও ভৌগলিক সখ্যতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমরা বন্ধুত্বের নির্দেশন স্বরূপ স্বীয় স্বার্থ এবং স্বাধীন সত্তাকে উৎসর্গ করতে পারি না। এখানেই পেটকামড়ি।
আমাদের ব্যাংকের তথ্যে ওপর ভর করে বলা যায় চলিত অর্থবছরে আমদানির চাইতে রপ্তানির ব্যবধান ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এটা আমাদেরকে রিজার্ভ ভাঙ্গিয়ে হউক বা স্বর্ণ মজুদ হ্রাস করে হউক সমতা ফিরিয়ে আনতেই হবে। এটা কৃচ্ছতা সাধন করে এলে কমিয়ে আনতেই হবে।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্য মোতাবেক চলতি অর্থবছরে শিল্প স্থাপনের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয় কমেছে (গত ৩ মাসে) ৮ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২০%। জ্বালানী তেল আমদানি কমেছে ১৪% এর অভ্যন্তরিন রহস্য হচ্ছে, শিল্প বিনিয়োগে ধস নেমেছে ফলশ্রæতিতে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে এবং শিল্প কাঁচামালের আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এ সংবাদটা আমাদের জন্য দুঃখজনক বটে। চলতি অর্থবছরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর আমদানি বিল পরিশোধ বাবত ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভের পরিমাণ ৩১.৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ভুটান, ভারত, ইরান, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এসব দেশে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নভুক্ত। সংক্ষেপে এসব দেশ আকুর সদস্য। যেসব পণ্য আকুভুক্ত দেশ থেকে আমদানি করা হয় প্রতি ২ মাস অন্তর আকুভুক্ত দেশের আমদানিবিল পরিশোধের নিয়ম আছে। সে সুবাদে গত ২ মাসে ৯৮ কোটি ৭০ ডলার টাকা পরিশোধ করা হয়।
আমাদের মুদ্রাস্ফীতিতে ৫.৪৭ শতাংশ ধরে রাখার কথা থাকলে ও তা ৫.৯০% তে উঠতে উঠতে বর্তমানে ৫.৪৫% শতাংশে নেমে এসেছে তাতেও শোকর।
রাজস্ব আদায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭% কম হয়েছে। বিনিয়োগে স্থবিরতা। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১০.৬৬% শতাংশে নেমে এসেছে।
পুঁজিবাজারের লেনদেন সূচক হতাশব্যাঞ্জক। অব্যাহত দরপতনের কারণে এ বাজার মুখথুবড়ে পড়েছে। ব্যাংকিং অব্যবস্থাপনা ও ঋণ খেলাপীদের কারণে কতিপয় ব্যাংকে লালবাতি জ্বলছে। ৬৭৫জন ঋণ গ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিত আদেশ নিয়ে বক্ষ প্রসারিত করে চলা ফেরা করছে। খেলাপী ঋণগ্রহণকারীগণ রোজ কেয়ামতের দিনেও ঋণ বোধহয় এ্যাডজাস্ট করবেনা। খেলাপী ঋণের ব্যাপারে আই এম এফ ঋণের পরিমাণ জানাতে নোটিশ দিয়েছে। সরকার সুদের হার ৬% ও ৯ % করে মাত্র ২% টাকা জমা করে ঋণ রিসিডিউল করার সুযোগ দিয়েছেন উৎসাহব্যাঞ্জক সাড়া মিলেনি।
সরকারের উচিত বিদেশে যার কূটনৈতিক হিসেবে কর্মরত আছেন তাদের স্কন্ধে কতিপয় দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। বিদেশে নিয়োগ প্রাপ্ত শ্রমিকদেরকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করলে বা তাদের ওপর কোন অত্যাচার নির্যাতনের খবরা খবর নেওয়া এবং সম্ভাব্য প্রতিকার করা।
বিদেশে শ্রমবাজার সন্ধান করা। জাপান বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে তা কূটনৈতিক উপায়ে দ্রæততম সময়ে কার্যকর করা।
বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যকে পরিচিত করে রপ্তানি আদেশ সংগ্রহ এবং প্রেরণের ব্যবস্থা করা।
সারাদেশে দক্ষ জনবল তৈরির ব্যাপারে সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন পৃষ্ঠপোশকতা আবশ্যক। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম পিডিবি’র উদ্যোগে ৮৭৫ জনকে দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। পত্রিকায় দেখা যায় ১৪০০০ মানুষকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ সরকারের উচিত হবে পূঁজিবাজার মুদ্রাবাজার এদুটোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শক্ত হস্তে সংস্কার সাধন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই হবে। মায়ের দুধের যেমন বিকল্প নেই তেমনি স্বদেশী বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। জনগণকে সঞ্চয়ে যেমন উৎসাহ যোগাতে হবে তেমনি বিনিয়োগে ও উৎসাহ যোগাতে হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে শরিক হতে উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থপাচার কারী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজ এরা দেশের পরম শত্রæ। এসবের বিরুদ্ধে সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা করা ফরজ কাজ।
লেখক : প্রাবন্ধিক