চোরাই পথে আসা মায়ানমারের সিগারেটে বাজার সয়লাব

127

পাশ্ববর্তী মায়ানমার থেকে চোরাইপথে আসা অবৈধ সিগারেটে সয়লাব হয়ে গেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকা। নিম্নমানের এসব সিগারেট মানুষের স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি সরকারকে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে। ছোট-বড় মুদি, পান-সিগারেটের দোকানে আমদানি নিষিদ্ধ বার্মিজ সিগারেট প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও তা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। অথচ সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান খাত সিগারেট। গত অর্থবছরে এখাত থেকে সরকারের আয় হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও অবৈধ সিগারেট বাজার দখল করায় তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চোরাই পথে আসা বার্মিজ সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িতরাই দেশে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চোরাই পথে সিগারেটের সাথে প্রচুর ইয়াবাও আনা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আতাঁত করা হয় সিগারেট পাচারের জন্য। কিন্তু এ সুযোগে সিগারেটের কার্টন বা বস্তায় করে নিয়ে আসা হয় ইয়াবার চালানও। যে কারণ ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে হলে অবৈধ সিগারেট পাচার বা ক্রয়-বিক্রয়ও বন্ধ করতে হবে।
২৮ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চৌমুহনী স্টেশনে সাদ্দাম স্টোর নামের একটি মুদি দোকানে দেখা গেছে মার্বেল, ম্যানসন, প্রিমিয়াম গোল্ড সহ আরো বিভিন্ন নামের প্রচুর বার্মিজ সিগারেট। এ বিষয়ে দোকান মালিক সাদ্দাম হোসেন জানান, এসব সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ এবং সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও চাহিদা থাকায় ছোট দোকানিদের বিক্রির জন্য তিনি এ সিগারেট ক্রয় করেছেন। কারা এসব সিগারেট বিক্রি করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অজ্ঞাত লোকজন এসে প্রথমে চাহিদা জানতে চান এবং কয়েকঘন্টা পর কৌশলে দোকানে সিগারেট সরবরাহ করে চলে যান। এসব সিগারেট এখন সবখানেই বিক্রি হচ্ছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আপত্তি থাকলের তিনি এসব সিগারেট বিক্রি করবেন না বলেও জানান।
জানা গেছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে চোরাই পথে বার্মিজ সিগারেট পাচার বেড়ে গেছে। এমনকি কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং উপজেলার প্রতিটি দোকানে প্রকাশ্যে এসব নিষিদ্ধ সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য প্রতিদিন ৫০ লাখ শলাকা সিগারেটের চাহিদা রয়েছে। অর্থাৎ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি হলেও সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না।
কেবল রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয়, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া উপজেলা এবং পাশর্^বর্তী বান্দরবান জেলায় আমদানি নিষিদ্ধ বার্মিজ সিগারেট এখন সর্বত্র প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রতিদিন ১ কোটি শলাকা সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য আড়াই কোটি টাকা। এরমধ্যে সিংহভাগ রাজস্ব পাওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা পাচ্ছে না। সিগারেট বিক্রয়কারি কয়েকজন দোকানী জানান, এখন যে পরিমাণ সিগারেট বিক্রি হচ্ছে তার এক তৃতীয়াংশ কেবল বৈধ অর্থাৎ রাজস্ব প্রদান করে এমন প্রতিষ্ঠানের। বার্মিজ সিগারেট প্রতিরোধ করা গেলে সরকার বিপুল রাজস্ব পাবে।