চৈত্রের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ চড়ল ছত্রিশে

139

আজকাল প্রকৃতি ঠিকঠাক যেন আবহাওয়া বিশারদদের পর্যবেক্ষণ আর পূর্বাভাস মেনে চলতে চাইছে। শীতের পর বসন্তের আধেকটা মানে বিদায়ী ফাগুন মাসেও আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পূর্বাভাসের খুব একটা হেরফের ঘটাতে পারেনি। এবার চৈত্রের শুরুটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে তারই ধারাবাহিকতার। পূর্বাভাস বলছে, মার্চের শেষদিকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছুঁতে পারে। তারই রিহার্সেল চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু হয়ে গেল কিনা! আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল রবিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস চট্টগ্রাম অঞ্চলের সীমান্তবর্তী টেকনাফেই রেকর্ড করেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবারের বসন্ত যেন রূপ-লাবণ্যে নিজেকে মেলে ধরার বদলে উষ্ণতা আর ঝড়-বাদলে নিজের নতুন চরিত্র নিয়ে হাজির হতে চাইছে। নইলে বসন্তের অর্ধেক বয়স সঙ্গী করে যে ফাগুন প্রকৃতি থেকে ক’দিন আগে বিদায় নিয়েছে, তাকে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ খানিকটা অচেনা মনে হবে কেন? মাসের শুরুতেই শিলাবৃষ্টির তাÐব দেশের বিভিন্ন জেলায়। কয়েক দফা কালবৈশাখীর ছোবলের সাক্ষীও হয়েছে কোনও কোনও অঞ্চল। পাগলা হাওয়ার সাথে মেঘলা আকাশ আর হাল্কা বৃষ্টির শীতল অনুভূতি কখনওবা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে শীত বিদায় নিলেও একেবারে পাততাড়ি গুটায়নি। পুরো ফাগুন জুড়েই ছিল রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের যেন লুকোচুরি খেলা।
অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, মার্চ মাসে ক্রমান্বয়ে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তাপমাত্রা বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। তবে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। একইভাবে এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার আলামত বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুদিন মাঝারি অথবা তীব্র কালবৈশাখী ও বজ্র-ঝড় এবং অন্যত্র দুই থেকে তিন দিন হাল্কা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী ও বজ্র-ঝড় হতে পারে। এরপর এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে পূর্বাভাসে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, গতবছর একই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই ওঠানামা করেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ গতকাল রবিবার পূর্বদেশকে বলেন, ‘এপ্রিল মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। একই সঙ্গে উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ারও আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
এর আগে ২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে দেশে গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই বছরের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে একশ’ ১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেশে তার আগে এপ্রিল মাসে এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে। সেটি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। এপ্রিল মাসে পাঁচ হাজার দুইশ’ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকেই স্বাভাবিক পরিমাণ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত প্রায় ৩৭ বছরে আট দফায় এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮১ সালের এপ্রিলে স্বাভাবিকের তুলনায় একশ’ ৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ২০১৭ সালের মার্চেও সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে একশ’ ৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এ মাসে রৌদ্রময় সময় কিংবা উজ্জ্বল সূর্য কিরণকাল সাধারণত পৌনে সাত থেকে আট ঘণ্টা থাকে।
উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণনা করেন।