চুলে কলপ, গোঁফে ছাঁট তারপরও ধরা সাহেদ

123

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম চুলে রঙ করে গোঁফ ছোট করে বোরকা পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টায় ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মহামারীকালে রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর ফাঁসের পর পালিয়ে যাওয়া এর চেয়ারম্যান সাহেদ এক সপ্তাহ পর বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে ধরা পড়েন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ে দাপট দেখানো বিশালবপু সাহেদ কাঁচাপাকা চুল আর বড় গোঁফ নিয়ে হাজির হতেন বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে। তবে গ্রেপ্তারের সময় তার চেহারায় ভিন্নতা দেখা যায়। খবর বিডিনিউজের
র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি চুলে কলপ করিয়েছিলেন এবং গোঁফও ছেঁটেছিলেন। বোরকা পরিহিত অবস্থায় নৌকায় করে পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য সে তার চুলও কালো করে ফেলেছিল।
দেবহাটা সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাহেদকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে গুলিসহ একটি ‘অবৈধ অস্ত্র’ পাওয়া গেছে বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেন, দালালের মাধ্যমে লবঙ্গবতী নদীর ইছামতিখাল দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ২টা থেকে ওই এলাকায় অভিযান শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। কিন্তু সে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেপ্তার করতে একটু সময় লেগেছে। গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাকে উত্তরার র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়ার পর উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেটি সাহেদের আরেকটি অফিস বলে র‌্যাব জানিয়েছে। সেখানেও জাল টাকা পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসার নামে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্য হওয়ার পর সাহেদের নানা প্রতারণার খবর ইতোমধ্যে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা এবং রিজেন্ট গ্রূপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছিল র‌্যাব।
ওই অভিযানের পর র‌্যাবের করা মামলায় বলা হয়, ‘এই হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষÐ।’
ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নানা কাজ হাসিল করে নেওয়া মোহাম্মদ সাহেদের কাছে ‘অনেক তথ্য’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। এরপর বুধবার বিকালে উত্তরার র‌্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের এই অভিযানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে উপস্থিত হন খোদ র‌্যাবপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি (সাহেদ) অনেক কিছু বলেছেন, তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাবে না।’
নানা কেলেঙ্কারি চেপে রেখে রিজেন্ট গ্রূপের চেয়ারম্যান বনে বিভিন্ন টেলিভিশনে নিয়মিত মুখ দেখাতেন সাহেদ। নিজেকে তিনি পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সহসম্পাদক। তার ফেসবুক পাতা ভরা বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবিতে।
মহামারীকালে করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পর ওই হাসপাতালে গত ৬ ও ৭ জুলাই অভিযান চালায় র‌্যাব। তখন হাসপাতালটির নানা দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ার পর জানা যায়, এ চিকিৎসালয়ের লাইসেন্সের মেয়াদ পার হয়ে গেছে বহু আগে। তখন সাহেদ লাপাত্তা হয়ে যান। আর র‌্যাবের ওই অভিযানের পর তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবরও সংবাদ মাধ্যমে আসতে শুরু করে। কিন্তু তা হদিস মিলছিল না।
পলাতক অবস্থায় সাহেদ কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিলেন কি না- সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘তাকে কেবল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সাথে কথা বললে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’
তিনি বলেন, সাহেদ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। ‘সে কখনও নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত বা কখনও চাকুরিরত সেনা কর্মকর্তা, কখনও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কখনও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিত বলে জানতে পারি। সে নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসাবে প্রচার করার চেষ্টা করলেও প্রকৃত অর্থে সে একজন ধুরন্ধর লোক।’
মাসুদের তথ্যে সাহেদ ধরা: মঙ্গলবার গ্রেপ্তার রিজেন্ট গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সাহেদকে তার পৈত্রিক জেলা সাতক্ষীরায় পাওয়া যায় বলে আল মামুন জানান।
রিজেন্ট হাসপাতালে দুর্নীতি-প্রতারণার অভিযোগে র‌্যাব যে মামলা করেছিল, তার ১৭ আসামির মধ্যে শীর্ষ দুজন হলেন সাহেদ ও মাসুদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাহেদ গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ছিল বলে জানান র‌্যাব মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘“জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, ঢাকাসহ কক্সবাজার, কুমিল্লা, সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করেছিল। বিভিন্নভাবে যানবাহন ব্যবহার করেছেন। কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে, কখনওবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গেছেন।’
বিশালবপু সাহেদ কাঁচাপাকা চুল আর বড় গোঁফ নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে হাজির হলেও গ্রেপ্তারের সময় তার চেহারায় ভিন্নতা দেখা যায়। র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন সাহেদ। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে সাহেদ চুলে কলপ করিয়েছিল এবং গোঁফও ছেঁটেছিল। বোরকা পরিহিত অবস্থায় নৌকায় করে পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য সে তার চুলও কালো করে ফেলেছিল।