চুনতী ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (স.) মাহফিল নবীপ্রেমিকদের মিলনমেলা

182

দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার অন্তর্গত চুনতি সিরাত ময়দানে ওলিকুলের শিরোমনি হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ (রহ.) প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা কর্তৃক প্রবর্তিত ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিক ১৯ দিনব্যাপী মাহফিলে সীরতুন্নবী (সা.) রূহানি ফয়েজ ও বরকত লাভের একটি অনন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মরুভূমিতে যেমন এক ফোটা বৃষ্টির পানির জন্য তৃষ্ণায় হাহাকার হয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকে তেমনি হাফেজ আহমদ (রহ.) শাহ সাহেব কেবলার দেশ-বিদেশের লাখো মুরিদ ১৯ দিনব্যাপী মাহফিলে শরিক হওয়ার জন্য প্রহর গুনতে থাকেন। এখানে তাঁরা নিজেই নিজের নফসানিয়াতকে বিসর্জন দিয়ে ধনী-গরিবে শিশু থেকে বৃদ্ধ, কৃষক শ্রমিক, গ্রাম থেকে শহরে, আলেম-আওমে, ছাত্র-শিক্ষকের, গ্রহীতা-দাতা, একাকার হয়ে যান তাদের মকসুদ শুধু একটাই, আল্লাহ-রাসুলের রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ। রাতভর যিকির ও ফিকির তাঁদের একটাই আশেক ও মাশুকের প্রেমময় পবিত্র খেলার এই মিলনমেলার মূলকেন্দ্রবিন্দু। নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর সীরতকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় পুরো ইন্তেজাম।
বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে ঠিক মাঝখানে পাহাড় পর্বতে শোভিত চুনতি সীরাত ময়দানকে ঘিরে শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম সকল বাধা ছিন্ন করে ব্যক্তিগত আরাম আয়েশ পদমর্যাদা ভুলে সকল স্তরের মানুষ পরিবার পরিজনের সান্নিধ্য লাভের কথা ভুলে গিয়ে একই সামিয়ানারের নিচে মিলিত হন নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা (স.)-এর প্রেমে। কী এক অনুপম শিক্ষা বিশাল মাহফিলে! নেই কোন আওয়াজ, বিশৃঙ্খলা। সীরত মাহফিলে অংশগ্রহণকারী আল্লাহ রাসুল প্রেমিকরা বেহেশতি খুশবোতে মাতোয়ারা। সর্বক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিগণ খেদমত নেওয়ার চাইতে অপর ভাইয়ের খেদমত করার আগ্রহী বেশি। তবরুক খাওয়ার নির্দিষ্ট প্যান্ডেলে একে অপরকে জায়গা ছেড়ে দিতে অভ্যস্ত, ইবাদত বন্দেগির মাঝেও মানুষকে সুস্থ থাকর জন্য, দেহের হক আদায়ের জন্য আহার গ্রহণ করতে হয়। সীরত মাহফিলে আগত লক্ষ লক্ষ মুমিন মুসলমানগণ নিরবে অর্থাৎ চুপ থেকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে তাবরুক গ্রহণ করেন, এই দৃশ্য কেউ না দেখে বিশ্বাস করার মতো নয়। এখানে এসে প্রকৃত সৌন্দর্য অনুধাবন সম্ভব নয়। এক বরকতময় তাবরুক যা প্লেটে এসেছে সেই তা গ্রহণ করেছে তৃপ্তির সাথে শেফা বা রোগব্যাধির নিরাময়ের নিয়তে। আল্লাহর রহমতে আরোগ্য লাভের এই সব কথা ভক্তবৃন্দের মুখে মুখে কিংবদন্তি হয়ে ফিরেছে।
এ সবই আল্লাহার মেহেরবানী, তরিকতের আশেকদের ভক্তির ফল। মাহফিলের সীরতুন্নবীর প্রথম দিন প্রতিবছর ১১ রবিউল আউয়াল বাদে যোহর শুরু হয়ে ২৯শে রবিউল আউয়াল সারাদিন সারারাতব্যাপী আলোচনা শেষে ফজর আজানের পূর্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের আমিন-আমিন ধ্বনিতে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে মাহফিল সম্পন্ন হয়। খেদমতের কী অনুপম দৃশ্য! প্রশিক্ষণের এই অশ্রæতপূর্ণ নমুনা। হাজারের অধিক কর্মীবৃন্দ আগত ব্যক্তিদের একটু খেদমত করতে পারলেই তাঁরা নিজেকে সার্থক মনে করেন। এই মাহফিলের প্রধান রূপকার হাদিয়ে জামান মুজাদ্দেদে মাহফিলে সীরতুন্নবী হাফেজ শাহ আহমদ (রহ.) পবিত্র মাহফিলে যে মোমিন মুসলমান নবীপ্রেমিকদের প্রশিক্ষণ ও সংশোধনের এক মহাবিদ্যালয় তা বিভিন্ন লেখকদের লেখনিতে ফুটে তুলেছে। ১৯৭২ সালের এক দিন দিয়ে শুরু করে আল্লাহর রহমতে ১৯ দিনব্যাপী মাহফিল চলমান হয়েছে আমার একান্ত বিশ্বাস যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে এই বিষয়ে হযরত শাহ সাহেব কেবলা (রহ.) উপর এলহাম হয়েছি। তাই এই মাহফিল নবীপ্রেমিদের জন্য ঈমানি মজবুতি লাভের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ। আজকে যারা মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা কখনো কল্পনা করতে পারবে না হযরত শাহ সাহেব কেবলা (রহ.) কত ত্যাগ শিকার করে অত্যন্ত অজপাড়াগায়ে আসতেন। তাঁর পায়ের পবিত্র ধুলায় ভাগ্য ফিরেছে শুধু চুনতী বা লোহাগাড়া না দক্ষিণ চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের জনগণের, সাতকানিয়া লোহাগাড়া ঘরে ঘরে শিক্ষিত লোকজন। মসজিদ, মাদরাসা, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তেমনিভাবে এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক-চাল-চলন, সাংস্কৃতিক রুচিবোধ প্রভৃতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শিক্ষা দীক্ষায় এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে পুরা এই অঞ্চলে। এই সবকিছুর মূল আল্লাহ এবং রাসুলের প্রিয়বন্ধু শাহ সাহেব কেবলা (রহ.)’র খাস দোয়া ও নেক নজর। এই মিশনকে অত্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শাহজাদা আবদুল মালেক মোহাম্মদ ইবনে দিনার নাজাতসহ মোতাওয়াল্লী কমিটি।
জগদ্বিখ্যাত আশেক-এ রাসূল (স.) মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ্ (রহ.) প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা (রহ.) তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও নবী করিম (স.) এর প্রেমে লিখেছেন: “হামমাজারে মুহম্মদ (স.) পে মর জায়েঙ্গে/ জিন্দেগি মে ইয়েহি কাম করে জায়েঙ্গে।” অর্থাৎ -মুহম্মদ (স.) এর উদ্দেশ্য আমার জীবন উৎসর্গিত, সারাজীবন তাঁর ধ্যানেই আমি থাকব নিয়োজিত। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধযুগে মানুষ যখন পাপে নিমজ্জিত হয়ে গেছে, হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে, মানুষের মাঝে থেকে মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে, তখনই এই পৃথিবীতে আগমন ঘটে প্রিয়নবী (স.)। তাঁর আগমনে সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে আলোয় আলোয় ভরে গিয়েছিল বিশ্বময়। তিনি বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন: “আমি তো তোমাকে বিশ্ব-জগতের কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।” আর রহমতের নবী মানব মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (স.) মানুষকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে, যখন মানুষের মধ্যে মানবতাবাধ ছিল না, সমস্ত পৃথিবী যখন জ্ঞানহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেই সময় রাহমাতুল্লিল আ’লামীন হযরত মুহাম্মদ (স.) মানবতাবোধের আলোকবর্তিকা নিয়ে দিশেহারা মানবজাতির নিকট আল্লাহর নির্দেশে হাজির হন। পাশ্চাত্য সভ্যতায় মানবাধিকার সম্বন্ধে বুঝতে শিখেছে এই তো মাত্র সেদিন থেকে, মু’মিন নর ও নারীগণ একে অপরের বন্ধু। এরা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজ হতে নিবৃত্ত করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) এর আনুগত্য করে; এদেরকে আল্লাহ কৃপা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের মর্মবাণী ও পবিত্র হাদিস শরীফের আলোকিত নির্দেশনাগুলো মানবসমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ্ (রহ.) সারাটাজীবন এই পথে ব্যয় করেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ডিপুটি বাড়ি কিংবা এই অঞ্চলটি একসময়ে শতভাগ মুসলমান শিক্ষিত অঞ্চল হিসেবে সমগ্র ভারতবর্ষে পরিচিত রয়েছে। চুনতীর ডিপুটি বাড়ি আজও তাঁর এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ইসলাম প্রচার ও প্রসারে এই অঞ্চলের ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ্ (রহ.) এর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি চুনতীতে রাসুল (স.) এর জীবনকর্ম প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রবর্তন করেছেন সীরতুন্নবী (স.) মাহফিল। বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে এই পূতপবিত্র মাহফিল মানুষকে ইহকাল ও পরকালের উত্তম ঠিকানা বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেই চলছে। ২০২০ সালে এই মাহফিলের ৫০তম বার্ষিকী অতিক্রম করেছে। এই মাহফিলে শত-শত দেশ ও জগদ্বিখ্যাত ইসলামী মনীষী, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, আলেম-ওলামা, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রদূত, আইনপ্রশাসক, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ মূল্যবান আলোচনা অংশগ্রহণ ও আলোচনা শ্রবণের মাধ্যমে দু’জাহানের কল্যাণকামী হয়েছেন। মূলত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ্ (রহ.) এই সীরত মাহফিল প্রবর্তনের মাধ্যমে ইতিহাসে যেমন একটি স্থান দখল করেছেন, অন্যদিকে দ্বীন ইসলাম প্রচার প্রসার ও কোরআন-হাদিস শরীফ এর শুদ্ধ চর্চায় ভূমিকা রেখেছেন।
নতুন প্রজন্মকে ঐতিহাসিক স্মরণীয় বরণীয় দুনিয়া ও আখেরাত জয়ী মহাপুরুষ মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ্ প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা (র.) জীবনী আলোচনায় আধ্যাত্মিক লাভ যেমন আছে তেমনি আছে পরলোকিক লাভ। তিনি সমসাময়িককালে সর্বশ্রেষ্ঠ ওলি ছিলেন। শাহ সাহেব কেবলা (র.) রেখে গেছেন চিশতিয়া তরিকা। যেমনি পৃথিবীর জন্য ও পৃথিবীর মানুষের জন্য রেখেগেছেন খাজা সাহেব কাদেরিয়া তরিকা। মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (র.) রেখে গেছেন মোজাদ্দেদি তরিকা। এই সব তরিকার আমলকারী দুনিয়াতে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। তেমনি শাহ সাহেব কেবলা (র.) ছিলেন তখনকার সময়ে ওলিদের সর্দার। প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (র.) মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স.) এর প্রেমে ডুবে গিয়ে সুদীর্ঘ ২৫ বছর পাহাড় পর্বতে গহীন অরণ্যে ধ্যানমগ্ন হয়ে সময় কাটিয়ে উপরোক্ত শ্লোক বারবার ধ্বনিত করতেন। আশেকে রসূল (স.) অলিকূল শিরোমনি মুজাদ্দেদে মাহফিলে সীরতুন্নবী (স.) প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ (রা.) প্রকাশ চুনতি শাহ সাহেব ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে চুনতির শাহ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। শাহ মঞ্জিলের মাওলানা সৈয়দ আহমদের ছয় ছেলে এক মেয়ের মধ্যে তিনি বড় সন্তান। হযরত শাহ সাহেব (র.) বাল্যকাল স্বীয় পিতার বিশেষ তত্ত¡াবধানে ও যোগ্য অগ্রজাগণের আদর-যতেœ বেড়ে ওঠেন। এ সময় তার প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আমিরাবাদ নিবাসী হযরত মাওলানা বজলুর রহমান (প্রকাশ নোয়া মৌলভী সাহেব) নিযুক্ত হন। তিনি নিজ গৃহের শান্ত পরিবেশে জ্ঞানার্জনের বিশেষ সুযোগ পেয়ে পবিত্র কুরআন মজিদের প্রথম সবক ও প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করে অল্প দিনের মধ্যে পবিত্র কুরআন খতম করেন এবং প্রচলিত মাতৃভাষা উর্দু, ফারসি এবং আরবি ইত্যাদি বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। হযরত মাওলানা ফজলুল হক (র.) বাঁশখালী ছনুয়া মনু মিয়াজি বাড়ীর মুরব্বি ও প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব হযরতুল আল্লামা মুহাম্মদ ফোরকান (র.) প্রমুখ অলিয়ে কেরামগণের ছোহবতে ইলমেদ্বীন হাসিল করেন। হযরত শাহ সাহেব কেবলার জীবন বিশ্লেষণ করলে হুজুরের যে ছবিটা আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে, তাতে হুজুরকে এক ব্যাখ্যায় ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে দ্বীনি শিক্ষার ব্রতী ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না। তাঁর সারাজীবনের কর্ম ও সাধনায় তিনি ইসলামের প্রচার ছাড়া জীবনে আর কিছু করার কথা ভাবেননি। তাই হযরত শাহ সাহেব (র.) ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও দ্বীন দরদী মানুষদের একই প্ল্যাটফরম জড়ো করে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসে সারা রাতব্যাপী একদিনের মাহাফিলের প্রবর্তন করেন। এই সীরাত মাহফিল ময়দানে শাহ মঞ্জিলের সামনে পর্যায়ক্রমে ১৯৭৩ সালে ৩ দিন, ১৯৭৪ সালে ৫ দিন, ১৯৭৬ সালে ১০ দিন, ১৯৭৭ সালে ১২ দিন, ১৯৭৮ সালে ১২ দিন, ১৯৭৯ সালে ১৫ দিনব্যাপী উদযাপন হয়ে আসছে। কিন্তু হযরত শাহ সাহেব (র.) মনপূর্ণ না হওয়ায় ২ দিন ২ দিন ৪ দিন বাড়িয়ে ১৯ দিনের মাহাফিল ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু করেন। হযরত শাহ সাহেব (র.) ইন্তিকালের বছর পর্যন্ত ১৯ দিন চালু রেখেছিলেন। ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (সা.) মাহফিল অদ্যাবধি যথারীতি উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য যে, উনার অবর্তমানে সীরতুন্নবী (সা.) এর চাঁদার টাকা পারিবারিক কাজে ব্যয়িত হয় না। অর্থ সম্পদের ব্যাপারে উনার কোনো মোহ ছিল না। ভক্তদের দেয়া অর্থও তিনি গরিব-দুঃখীদেরকে বিতরণ করে দিতেন। মৃত্যুকালে তাঁর নিকট সঞ্চয় বলতে এক কপর্দকও ছিল না।
পরিশেষে হযরত শাহ ছাহেব কেবলা (র.) লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও গুণগ্রাহীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে সীরতুন্নবী (স.) মাহফিল এর ১৯ দিন পূর্বে ২৩ সফর ১৪০৪ হিজরি, ২৯ নভেম্বর ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ অগ্রহায়ন ১৩৯০ বাংলা সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে উনার রবের সান্নিধ্যে চলে যান ‘ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজেউন’ (আহমদুল ইসলাম চৌধুরীর গ্রন্থ হযরত শাহ সাহেব (রহ.) চুনতী থেকে তথ্য সংকলিত)।
মসজিদে বায়তুল্লাহর দক্ষিণ পার্শ্বে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত থেকে যেন প্রত্যক্ষ করছেন উনার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহ। রাব্বুল আলামীন উনাকে জান্নাতের আলা মকাম নছীব করুন, চুনতি হাফেজ আহমদ (রাহ.আ.) প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা কর্তৃক প্রবর্তিত ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাহফিলের সফলতা কামনা করি এবং আল্লাহ উনার এই প্রতিষ্ঠানসমূকে কেয়ামত পর্যন্ত জারি রাখুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, অনলাইন জার্নালিস্ট