চীন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

48

সফরসঙ্গীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার বিকাল সোয়া ৫টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে চীনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ১০ মিনিট) পরে ডালিয়ানের ঝৌশুইজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে শাংগ্রিলা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ডালিয়ানে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় অংশ নেওয়ার সময় এ হোটেলেই অবস্থান করবেন তিনি।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে এ সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামার ডাভোস নামে পরিচিতি পাওয়া ডালিয়ানের এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, শিক্ষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রের প্রায় দুই হাজার প্রতিনিধি অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর তার গত মেয়াদের বেইজিং সফরের চেয়ে ভিন্ন হচ্ছে। ওই সফরে মূলত বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হলেও এবার রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৪ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি তুলে ধরবেন।
ডালিয়ানে ‘ডবিøইএফ অ্যানুয়াল মিটিং অব দ্যা নিউ চ্যাম্পিয়ন্স-২০১৯’ বা সামার দাভোস-এ অংশ নেওয়া শেষে বুধবার একটি বিশেষ চীনা ফ্লাইটে বেইজিংয়ে যাবেন শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মটর শোভাযাত্রা সহকারে দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানীতে সফরকালে তিনি এই হোটেলেই থাকবেন। ওইদিন বিকালে বেইজিংয়ে বাংলাদেশিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন।
পরের দিন গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশ নেবেন। একই দিন বিকালে সিসিপিআইটিতে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
৫ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর চীনা থিংক ট্যাংক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরাও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন বলে তার সূচিতে রয়েছে।
চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি জান শু’র সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে শি চিন পিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তাকেই বিবেচনা হয়।
বিকালে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় বৈঠকের পর তার সম্মানে দেওয়া চীনা প্রেসিডেন্টের ভোজ সভায়ও অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এসব প্রকল্পে মোট কত টাকা ঋণ নেওয়া হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
চুক্তিগুলো ও সমঝোতাগুলো হল, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স¤প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স¤প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট। ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স¤প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট। পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি। ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ রয়েছেন।
চীন সফর শেষে আগামী ৬ জুলাই বাংলাদেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।