চীনে ১২শ বছরের পুরোনো ক্যালিগ্রাফি নিয়ে ক্ষোভ

54

তাইওয়ানের ন্যাশনাল প্যালেস মিউজিয়াম একটি বিরল ক্যালিগ্রাফি জাপানের টোকিওর ন্যাশনাল মিউজিয়ামে ধার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতেই ভীষণ আক্রোশ তৈরি হয়েছে চীনে। নথিপত্র অনুযায়ী এটা দেখে মনে হচ্ছে এটা সরাসরি সংস্কৃতির আদান-প্রদান। ‘রিকুইয়াম টু মাই নেফিউ’ নামে ক্যালিগ্রাফিটি এঁকেছিলেন ইয়ান ঝেনকিং নামে একজন যাকে মনে করা হয় চীনের একজন মহান ক্যালিগ্রাফার।
তিনি বেঁচে ছিলেন ৭০৯ থেকে ৭৮৫ এডির মধ্যেকার সময়ে। ভাইয়ের ছেলে মারা যাওয়ার পর ইয়ান ঝেনকিং লিখেছিলেন এই ক্যালিগ্রাফি। চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকং এর একজন অধ্যাপক টং কাম টাং তার সম্পর্কে বলেছেন ‘তিনি চীনের খুব সুপরিচিত একটা নাম। যখন একজন অল্প বয়সে চীনের শিল্প সম্পর্কে পড়াশোনা করে তখনই সে তাঁর (ইয়ান ঝেনকিং) সম্পর্কে জানতে পারে।’
মি. টং বলেন, এই মাস্টারপিসটি ইয়ান ঝেনকিং একটা খসড়া আকারে করেন। এই শিল্পকর্মটি কয়েকশ বছর ধরে চীন সংরক্ষণ করে রেখেছিল। ১৯৪০ সালে তাইওয়ান অন্যান্য শিল্পকর্মের সাথে এটিও নিয়ে যায়। সেই থেকে তাইওয়ানের ন্যাশনাল প্যালেস মিউজিয়াম অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে এটা সংরক্ষণ করে রেখেছে। তবে এটা দ্বিতীয়বারের মত বিদেশে নেয়া হয়েছে। এটি প্রথম বার ১৯৯৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল গ্যালারি অব আর্টে নেয়া হয়। তারপর থেকেই এটা তাইওয়ানে রয়েছে। এখন এই ক্যালিগ্রাফিটি টোকিওর এক শিল্প প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে। এদিকে এই খবরে চীনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ওয়েবো তে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই ক্যালিগ্রাফিটি টোকিওর এক শিল্প প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৬০ মিলিয়নের বেশি বার পড়া হয়েছে ওয়েবে। অনেকেই জাপান এবং চীনের যুদ্ধের সময়কার ইতিহাস, সেই সাথে জাপান কীভাবে চীনের অংশ দখল করেছিল সে প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। যেটা চীনের জন্য এখনো অনেক সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে দেখেন অনেকে।
একজন লিখেছেন ‘তাইওয়ান কি ভুলে গেছে জাপান আমাদের সাথে কি করেছিল? তারা কি জানে নানজিঙ গণহত্যা কি?’
১৯৩৭ সালে জাপানের সৈন্যরা চীনের পূর্বের শহরে হামলা করে। চীন বলে, তিন লক্ষের মত মানুষ গণহত্যার শিকার হয়। আবার জাপান পুরো বিষয়টা অস্বীকার করে, তাদের দাবি কোন হত্যাকান্ডই ঘটেনি। এটা পরিষ্কার যে বেশির ভাগ মানুষ রাগ প্রকাশ করেছেন তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক ইয়ান চং বলেছেন, ‘১৯৩০ থেকে ৪০ দশকের সময়ে চীনের বিভিন্ন অংশ জাপান যে ধরনের নৃশংস অভিযান চালায় সেটা এখনো প্রকটভাবে চীনের মানুষের মনে গেথে আছে। চীন ক্রমাগতভাবে সেই স্মৃতিকে টেনে নিয়ে আসছে।’
তাইওয়ানের নিজস্ব সরকারি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৪৯ থেকে তারা স্বাধীন দেশের মত কার্যকলাপ পরিচালনা করে থাকে।
যদিও চীন মনে করে এই দ্বীপটি চীনের একটি অংশ এবং একদিন তা চীনের সাথে একত্রিত হবে। এই মাসের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং তাইওয়ানকে আহব্বান জানিয়েছিলেন- তাইওয়ান একদিন চীনের সাথে যে অবশ্যই একত্রিত হবে সেটা মেনে নিতে।