চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে

174

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় নগরীর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনি, ভোজ্যতেল ও এলাচের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এ দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত সপ্তাহে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে এ সপ্তাহে মণপ্রতি ৩২ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতিমণ বা ৩৭ দশমিক ৩২ কেজি চিনি ২ হাজার ১৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে কেজিপ্রতি চিনির পাইকারী মূল্য ৫৭ টাকা ১৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েই চলেছে তেলের বাজার। গত সপ্তাহে ৩ হাজার ৭০ টাকা প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হলেও গত বৃহস্পতিবার তা ৩ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে প্রতিকেজি সয়াবিনের পাইকারী মূল্য ৮২ টাকা ২৬ পয়সা থেকে ৮৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতিকেজিতে ৪ টাকা ৭৪ পয়সা বেড়েছে। অন্যদিকে পাম অয়েল গত সপ্তাহে মণপ্রতি ২ হাজার ৭২০ টাকায় বিক্রি হলেও গত বৃহস্পতিবার তা ২ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। কেজিপ্রতি ৭২ টাকা ৮৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৭৬ টাকা ৩৭ পয়সা হয়েছে। অর্থাৎ পাইকারী বাজারে কেজিপ্রতি পাম অয়েলের মূল্য ৩ টাকা ৪৯ পয়সা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে এলাচি প্রতিকেজি ৩ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও গত বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারী বাজারে কেজিপ্রতি এলাচির মূল্য ৩০০ টাকা বেড়েছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, চিনি ও এলাচের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে খাতুনগঞ্জের পাইকারী ব্যবসায়ীরা। যদিও তারা কমে দামেই এসব পণ্য ক্রয় করেছিল।
নগরীর খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজারে পণ্য কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, তেল, চিনি ও এলাচির দাম প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ার ফলে এখানেও বেড়েছে। তবে তা সত্যি কিনা জানিনা। এসব ভোগ্যপণ্যের দাম আমরাই বাড়িয়ে দিচ্ছি বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ।
আরেক খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বলেন, বাজারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত। যাতে করে কোন সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে না উঠে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ালে দেশে কীভাবে দাম কমানো যায় সে ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাবা উচিত। তাহলে অন্তত বাজার ঠিক থাকবে।
কোতোয়ালী মোড়ের খুচরা ব্যবসায়ী মো. আবুল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিকেজি চিনিতে ৫ টাকার বেশি লাভ করিনা। সিটি গ্রূপের চিনি প্রতিমণ কিনতে হয়েছে ২ হাজার ১৩২ টাকায় অর্থাৎ প্রতিকেজি ৫৮ টাকায় কিনছি। তা আমরা ৬৩ টাকায় বিক্রি করছি। একমণ সয়াবিন বা পাম তেলের মধ্যে অতিরিক্ত দাম নিতে পারি না। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে ৩ থেকে ৫ টাকা রেখে বিক্রি করছি।
বাংলাদেশ হোলসেলার স্পাইসি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাস পূর্বদেশকে বলেন, ভারতে আজকে (বৃহস্পতিবার) প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকারও বেশি। সে তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কমে আছে বলে মনে করি। গত অক্টোবর থেকে গুয়েতেমালা থেকে এলাচ আনা সম্ভব হচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের পিএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এমদাদুল হক রায়হান বলেন, সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী বিক্রি করলে প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা দাম পড়বে। কিন্তু দেশের বাজারে এখনো ৩ হাজার ২৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা আগের দরেই বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল এবং আমেরিকা থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করতে হয়। সে অনুযায়ী ওইসব দেশে দাম বৃদ্ধি পেলেই আমাদের এখানে প্রভাব পড়ে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা যেসব পণ্য আগে কিনে বা এলসি করে এনেছিলেন সেগুলো এখন আগের দরেই বিক্রি করছেন। নতুন করে আমদানি করলেই দাম আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে জানান, খাতুনগঞ্জে আমরা সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং এ আছি। যদি কোন ব্যবসায়ী বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম বেড়ে যায়, দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কেউ যদি জোর করে দাম বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক সেটি আমরা চাই না।