চাহিদা মেটাতে শিক্ষাখাতের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে কর্পোরেশন

35

শিক্ষার্থীর চাহিদা পূরণ ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে শিক্ষা বিভাগের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গত চার বছরে ৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ, অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা খোলা, এমপিওভুক্তিকরণ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কলেজে উন্নীতিকরণসহ চাহিদার প্রেক্ষিতে সহশিক্ষা চালু করেছে চসিক। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শতভাগ শিক্ষিত জাতি গঠনের অংশ হিসেবে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিকের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মৌলিক কাজের বাইরে গিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কেননা তাদের শিক্ষার বাইরে রেখে আমরা কখনও উন্নত শহর-উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখতে পারি না।
চসিকের শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছে চসিক। ২০১৬ সালে পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন কলেজ ও চসিক মিউনসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ২০১৮ সালে ফয়েতাবাদ ডিগ্রি কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ এবং সর্বশেষ চলতি বছরে হাতেকড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়াও ফয়েতায়াবাদ বহুমুখী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে একাদশ শ্রেণিতে উন্নীতকরণ করা হয়।
এছাড়াও নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সিটি কর্পোরেশন ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭টি কিন্ডারগার্টেন, ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮টি স্নাতক (পাস) কলেজ, ২টি স্নাতক (অনার্স) কলেজসহ ২১টি কলেজ, ১টি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৩টি কম্পিউটার কলেজ, ১টি থিয়েটার ইনস্টিটিউট ও ১টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করে সিটি কর্পোরেশন।
গত চার বছরে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আরও ৪টি মাধ্যমিক স্কুল থেকে কলেজে উন্নীতকরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্কুল শাখা থেকে কলেজ শাখার ইআইআইএন নম্বর পৃথিকীকরণ করা হয়েছে ৫টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের। সহশিক্ষা চালু সম্পন্ন করা হয়েছে পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন কলেজ ও ফতেয়াবাদ শৈলবালা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের চাহিদার চাপ মেটাতে ১৩ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৬টি অতিরিক্ত শ্রেণি খোলার অনুমতির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নতুন ৫ তলা ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৬ তলা ভবন ৮টি, ৪ তলা ১টি, ১ তলা ভবন ১টি এবং উর্ধ্বমুখী ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আবার জাইকার অর্থায়নে ৭ তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ৪ তলা ভবন ২টি, ৬ তলা ভবন ৪টি, ২তলা একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান ও ১টি সেমিপাকা ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া ৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সরকার প্রদেয় ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাব স্থাপন করেছে সিটি কর্পোরেশন।
শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহিত পদক্ষেপ
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শিক্ষক-কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, শিক্ষক ও অভিভাবকের সাথে মাসিক সমাবেশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাদ বাগান, আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নীতিমালা প্রণয়ন, মেয়রের নির্দেশে প্রতিদিন শ্রেণি কার্যক্রমের শুরুতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নীতি-নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কার্যক্রম চালু করেছে চসিক।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, চসিক নগরীর সাধারণ মানুষের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ ছিল, তাদেরই শিক্ষা নিশ্চিত করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। শুধু সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় নয়, বাইরেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষা নিশ্চিত করছে কর্পোরেশন। যেমন আয়ুব সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কুয়াইশ বুডিশ্চর শেখ মো. সিটি কর্পোরেশন কলেজ শহরের বাইরে অবস্থিত নগরের বাইরে বিশাল প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে চসিক। এছাড়া শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষা প্রদান নয়, মান নিয়ন্ত্রণে চলছে জোর প্রচেষ্টা। ১৮০ দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। একটি সুনির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে। যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম ও সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। মাদক ও প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে এসবের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া শিক্ষার্থী ও নগরবাসীর বই পড়ার তৃষ্ণা মেটাতে সম্মিলিক একুশে বইমেলার আয়োজন করে আসছে চসিক। এই ধারা আগামিতেও অব্যাহত রাখতে চায় চসিক।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, আমরা চাচ্ছি শহরকে উন্নত করতে। যদি উন্নত মনমানসিকতার নাগরিক সৃষ্টি না হয়, তাহলে বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব না। চসিকই বাংলাদেশে একমাত্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষার জন্য কাজ করে এসেছে। প্রতি বছর আমাদের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হয়। তবে সেটা নগরীর জন্য বিনিয়োগ। সারাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে একদিন চট্টগ্রামের সকল স্তরের মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠবে। তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হবে। তারই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি ।