চালের মূল্য কমেনি বাজারে কারসাজি থামাতেই হবে

34

চাল নেিয় চালবাজি এখনও অব্যাহত রয়েেছ। পইকারি ব্যবসায়ী ও মোকামীদের কারসাজিতে থামছেনা চালের ঊর্ধ্বগতি দাম। গণমাধ্যমে বাঙালির প্রধান খাদ্য চালের দাম নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও সম্প্রচার হতে থাকলে খাদ্যমন্ত্রী চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের ১০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে ১৫দিন পূর্বের দামে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু বাজারে মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশের কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা। মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের প্রধান দুই চালের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী নেতা ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রতিবেদক উল্লেখ করেন, নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলীর পাইকারি বাজারে গত দুই সপ্তাহেও চালের দাম কমেনি। অথচ খাদ্যমন্ত্রী ১০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে এনে ১৫ দিন পূর্বের দামে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা। তারা চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে চালের দাম কমেনি বলে জানান। যার কারণে গত দুই সপ্তাহে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী যেভাবে বলেছিলেন সেভাবে মোকামরা কথা রাখেননি। তাই বাজারে চালের দামও কমেনি। তারা যদি চাহিদামত চাল পাঠান, তবে চালের সংকট গুছিয়ে দামও কমে আসবে। এছাড়া সরকার এখন আমদানির দিকে যাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে। আবার কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মতে, চট্টগ্রামে চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে তাদের কোন হাত নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের মিলওয়ালারা একটি সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ সিন্ডিকেট কারসাজির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়, চট্টগ্রামের চালের পাইকারি দোকানে উত্তবঙ্গের প্রতিনিধি নিয়োগের ঘটনায়। অভিযোগ উঠেছে, উত্তরবঙ্গের মিল মালিকরা চট্টগ্রামের বড় বড় দোকানে তাদের নিজস্ব একজন প্রতিনিধি রাখেন, যাদের মাধ্যমে বাজারে চাহিদার বিষয়টি মিল মালিকদের জানাতে পারেন। সে অনুযায়ী চট্টগ্রামে যদি দৈনিক ৫০ টনের চাহিদা থাকে, তবে মিল মালিকরা পাঠাবে ৩০ টন আর ২০ টন না পাঠিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে এবং বলবে চালের বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা না বাড়লে আমরা চাল দিবো না। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে চাল কিনতে হয়। এতসবের মধ্যে আশার কথা, নতুন আমন ধান বাজারে আসতে শুরু করেছে বিধায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজার নিম্নমুখি হবে-এমনটি বলেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তারা আরো আশ্বস্ত করেছেন, বর্তমানে চাক্তাই ও পাহাড়তলী পর্যাপ্ত চাল রয়েছে।
আমরা লক্ষ করেছি, দেশের উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে বন্যা হলেও চলতি আমন মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে যাতে কৃষক ও মিলাররা চাল সরবরাহে উৎসাহী হয়, সে জন্য সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়ে প্রতি কেজি ৩৯ টাকা করা হয়েছে। এখন বলা যায়, আপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের হাতে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাবও আমরা দেখেছি। কিন্তু হঠাৎ কেন বাজার ঊর্ধ্বমুখী? প্রভাবশালী কিছু মালিক ও আমদানিকারকরা কি ফের জোট বেঁধেছে? কারণ যাই হোক, চড়া বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশেষভাবে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বাজার চড়িয়ে দিতে থাকলে খোলা বাজারে বাজারদরের তুলনায় কম দরে চাল বিক্রি করে সরকার বহু বছর খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। এখন তারা এ পদক্ষেপ নিতেই পারে। তবে তারও আগে চাই জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বন্যা ও ভারতের বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন। কিন্তু দেশের বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা চালের পরিমাণ আমাদের মোট চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য। আমাদের ব্যবসায়ীরা মুক্তবাজার অর্থনীতির তত্ত্বের কথা বড় গলায় বলেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার থাকেন। কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা এবং মূল্য হ্রাসে সহায়ক যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও কেন প্রধান খাদ্যশস্যের বাজারে অস্থিরতা? সরকারকে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। ভাংতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাত। সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে যারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে চায়, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।