চার ফরোয়ার্ড নিয়ে ভারতকে আক্রমণের ছক বাংলাদেশের

43

ভারতের বিপক্ষে প্রাণবাজি লড়াইয়ের পণ মেয়েদের। গোলাম রব্বানী ছোটনও বাঁচা-মরার লড়াইয়ে জিততে প্রতিপক্ষকে চার ফরোয়ার্ড দিয়ে আক্রমণের ছক কষছেন। সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকার ও সানজিদা খাতুন-এই চারজনকে ভারতের রক্ষণে আক্রমণ শানাতে পাঠাবেন বাংলাদেশ কোচ। নেপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গসালা স্টেডিয়ামে আজ বুধবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দল। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। বাংলাদেশের সেরা সাফল্য গতবার ভারতের কাছে শিলিগুঁড়ি-গুয়াহাটির ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হওয়া।
সাফের পরিসংখ্যানের পাতায় একচ্ছত্র আধিপত্য ভারতের। এ পর্যন্ত খেলা ২১ ম্যাচে ২০টিতে জয়; ড্র মাত্র একটি। সেটা ২০১৬ সালের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সাফ, অলিম্পিক বাছাই, এসএ গেমস মিলিয়ে পরিসংখ্যান করলে নয় ম্যাচে বাংলাদেশকে আটবার হারিয়েছে তারা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের জালে ভারত গোল দিয়েছে ৩৯বার। বাংলাদেশ মাত্র চারবার। ২০১৪ সালের সাফে এবং ২০১৬ সালের এসএ গেমসে সাবিনা, গত সাফে স্বপ্না ও গত নভেম্বরে অলিম্পিক বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে গোল পেয়েছিলেন কৃষ্ণা। এই তিন জনই আছেন রব্বানীর এবারের আক্রমণভাগে। সাফের চারবারের চ্যাম্পিয়নকে আটকাতে বিরাটনগরের দিল্লি পাবলিক স্কুল মাঠে মঙ্গলবার সেরা একাদশ নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও সেরেছেন কোচ।
‘ফরোয়ার্ড লাইনে থাকবে চারজন সাবিনা, স্বপ্না, কৃষ্ণা ও সানজিদা। পেছনে লেফটে শামসুন্নাহার সিনিয়র, ডানে শিউলি আজিম, সেন্ট্রালে আঁখি খাতুন ও মাসুরা পারভীন। মাঝ মাঠে মারিয়া মান্ডা ও মনিকা চাকমা।’ ‘চার জনের সংঘবদ্ধ আক্রমণ হবে। নেপালের ম্যাচে কৃষ্ণা না থাকায় স্বপ্নাকে বেশি ইফোর্ট দিতে হয়েছিল। কিন্তু এখন কৃষ্ণা ও সানজিদা থাকবে বলে স্বপ্নাকে কম ইফোর্ট দিতে হবে; নিজের খেলাটা সে খেলতে পারবে।’
‘সেমি-ফাইনাল ম্যাচ, অন্যরকম ম্যাচ। ভারত চারবারের চ্যাম্পিয়ন। তাদের অনেক অভিজ্ঞ ফুটবলার আছে। কিন্তু এখন আর এগুলো নিয়ে আমাদের ভাবার অবকাশ নেই। আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামবো। মেয়েরা সর্বোচ্চ দিয়েই খেলবে।’ ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের স্মৃতি অবশ্য মোটেই সুখের নয়। গত নভেম্বরে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে ৭-১ গোলে হেরেছিল দল। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের জালে ৪ গোল করা বালা দেবী এবং দুই গোল করা কমলা দেবীর ভারতের সাফের দলে না থাকাটা স্বস্তির বলে জানান রব্বানী। তবে মিয়ানমারের সেই ম্যাচে এক গোল করা সাঞ্জু যাদব থাকায় তাকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনাও আছে কোচের।
চলতি সাফে গ্রæপ পর্বের দুই ম্যাচে ১১ গোল দিয়ে একটিও হজম করেনি ভারত। অন্যদিকে ভুটানকে দুটি দিয়ে বাংলাদেশে স্বাগতিক নেপালের কাছে খায় তিনটি। রব্বানী ভারতকে শক্তিশালী মানলেও ‘যেকোনো কিছু ঘটতে পারে’ বলে জানালেন।
‘কোচ হিসেবে আমি মনে করি না এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ। আমাদের থেকে হয়তো তারা এগিয়ে আছে। কিন্তু পিছিয়ে থাকা দলের জয়ের অনেক ঘটনা পৃথিবীতে আছে। যে কোন কিছু ঘটতেই পারে।’ নেপাল ম্যাচে ম্যান টু ম্যান মার্কিংয়ের ছক সফল হয়নি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের গতির সঙ্গে পেরে না ওঠায়। ভারত দলেও গতিসম্পন্ন খেলোয়াড় থাকায় জোনাল মার্কিংয়ের পরিকল্পনা রব্বানীর। ‘এ ম্যাচে জোনাল মার্কিংয়ে যাবো। যার সামনে যে যাবে সে তাকেই আটকাবে মেয়েরা। ওরা যেহেতু খেলাটা মধ্যমাঠেই তৈরী করে। তখন মারিয়া ও মনিকাকে ডিফেন্ড করতে হবে। ওদের দু’জনের ডাবল রোল থাকবে। ডিফেন্সের সময় ডিফেন্স, আক্রমণের সময় আক্রমণ।’
ভারত কোচ মায়মল রকিও ঘোষণা দিয়েছেন আক্রমণাত্মক খেলে ম্যাচ বের করে নেওয়ার। তবে সেরা চারে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়াটা কঠিন বলেও জানান তিনি। ‘বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতার অন্যতম ভালো দল। সেমি-ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হওয়া আমাদের জন্য কঠিন। তবে আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে ফাইনালে ওঠার জন্য খেলব। ওদের দুটো ম্যাচই আমি দেখেছি। ওদের বিপক্ষে আমার পছন্দ আক্রমণাত্মক খেলা।’