চামড়া শিল্প হুমকিতে পড়বে : ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন

33

কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিলে দেশের চামড়া শিল্প ‘হুমকির মুখে পড়বে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বুধবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। সংগঠনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ বলেন, ‘কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হলে চামড়া শিল্প নগরীতে ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। সাভারের আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী তখন কাঁচামালের অভাবে অকেজোঁ হয়ে পড়বে। এই শিল্পের সাথে জড়িত বিস্তর জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে যাবে’।
বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। কিন্তু এবার ঈদের দিন থেকেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসতে থাকে। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া থাকা টাকা দেননি- এই যুক্তি দেখিয়ে আড়তদাররা চামড়া কেনা বন্ধ রাখলে সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে। চামড়া সংরক্ষণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা ফড়িয়া আর মৌসুমী ব্যবসায়ীদের থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নামমাত্র দামে চামড়া কিনেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
দিনাজপুরে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাজারে ফেলে চলে যান মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামেও লাখখানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেগুলো সরিয়ে মাটিচাপা দেয় সিটি কর্পোরেশন।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে’। খবর বিডিনিউজের
ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ট্যানার্স অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি শাহিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক। আমরা সরকার ও জনগণকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, আগামী ২০ আগস্ট থেকে আমরা সরকারনির্ধারিত দামেই লবণ দেওয়া চামড়া কেনা শুরু করব। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করুন’।
ঢাকায় এবার প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি ব্যবসায়ীদের। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দরে কেনাবেচা হওয়ার কথা। ট্যানারিগুলোর কাছে ৩০০ কোটি টাকা বকেয়া থাকার যে অভিযোগ পাইকাররা করছে, তা অস্বীকার করে শাহিন বলেন, ‘আড়তদাররা বকেয়া টাকা না পাওয়ার কথা বলে প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে কম দামে চামড়া কিনেছে। বড় আড়তদাররা এবার চামড়ার বাজারটাকে ম্যানুপুলেট করেছে’।
এই ট্যানারি মালিকের দাবি, ২০১৭ সালের আগে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা চামড়া ব্যবসায়ীদের শতভাগ বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছেন। এখন সাভারে স্থানান্তরের ফলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ট্যানারি উৎপাদনে যেতে পারেনি। তাই কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কিছু টাকা বকেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের ২২০টি ট্যানারি থেকে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি বর্গফুট কাঁচা চামড়া (হাইড ও স্কিন) প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৯৮ শতকাংশ গরুর চামড়া। এরপর ছাগলের চামড়া ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও মহিষের চামড়া ২ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ভেড়ার চামড়া রয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত চামড়ার মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি রপ্তানি করা হয়। বাকি চামড়া ব্যবহৃত হয় দেশের ৯৩টি বড় নিবন্ধিত জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল হিসেবে।
চামড়া শিল্পের বাজারে সঠিক ব্যবস্থাপনা চালুর আহŸান জানিয়ে ট্যানার্স অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘পশুর গা থেকে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থাপনা নাই। চামড়া সংগ্রহ থেকে শুরু করে ট্যানারি মালিকদের কাছে পৌঁছে দিতে সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এটা না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে’।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসেসিয়েশনের মহাসচিব শাখাওয়াত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।