চামড়া শিল্পে সমস্যা কেটেছে: শিল্পমন্ত্রী

35

ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে আড়তদারদের রাজি করানোর পর শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেছেন, চামড়া শিল্পে সমস্যা আপাতত আর নেই। রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বৈঠকের পর আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, তারা এখন থেকে কাঁচা চামড়া বিক্রি শুরু করবেন।
যে বকেয়া পাওনার দাবিতে তারা ট্যানারিগুলোতে চামড়া বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে ২২ অগাস্ট এফবিসিসিআইর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দরপতনের কারণে এবার কোরবানির ঈদের পর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের পর আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের টানাপড়েনে চামড়া নিয়ে দেখা দেয় বড় ধরনের জটিলতা। তার পরিপ্রেক্ষিতে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বৈঠক শেষে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, “সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত, আজ থেকেই চামড়া বিক্রি শুরু করা হবে।”
শিল্পমন্ত্রী বলেন, “চামড়া শিল্পে সমস্যা আপাতত নাই। আজ থেকে তারা চামড়া বিক্রি শুরু করবে। আগামীতে যে সমস্যাগুলো আছে, তা ২২ তারিখে সমাধান করে দেবে।”
ট্যানারিগুলোর কাছে বকেয়ার বিষয়ে দেলোয়ার বলেন, “মাননীয় মন্ত্রী ও উপদেষ্টা মহোদয় এফবিসিসিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী ২২ অগাস্ট এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে এ নিয়ে আলোচনা হবে দুই পক্ষের মধ্যে। সেখান থেকেই ফয়সালা করে দেবে।”
আড়তদাররা শনিবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ট্যানারিগুলোর কাছে তাদের শত শত কোটি টাকা পাওনা। সেই টাকা না পেলে তারা এবার কাঁচা চামড়া ট্যানারিগুলোতে বিক্রি করবেন না।
আড়তদারদের পাওনার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ব্যবসায়ীর কাছে ব্যবসায়ীর বকেয়া একটি ‘চলমান প্রক্রিয়া’।
বাংলাদেশে চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি করতে ট্যানারিগুলোতে চামড়ার যে চাহিদা, তার বড় অংশই মেটে ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশু থেকে। কোরবানির পশুর চামড়া মূলত কেনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া যায় আড়তগুলোতে। সেখান থেকে চামড়া কেনেন ট্যানারি মালিকরা।
এবার কাঁচা চামড়ার দর দেখে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শুধু চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লাখখানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে যান। দিনাজপুর, শেরপুরেও অনেক চামড়া এভাবে ফেলে দেওয়া হয়। শিল্পমন্ত্রী বলেন, এবার ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা বৈঠকে হিসাব দেখিয়েছেন।
“আমরা হিসাব করে দেখলাম, প্রতি বছর ৫ হাজার চামড়া নষ্ট হয়, সব সময় এটা হয়ে থাকে। দেশের এ আবহাওয়ায় জেলা ওয়ারি হিসাবে ব্যবসায়ীরা দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন, ১০ হাজার চামড়া নষ্ট হতে পারে।”
উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “কোরবানিতে এক কোটি চামড়া হয়; এখানে যারা আছে, তারা বলেছে ১০ হাজার নষ্ট হয়েছে।
“উনারা বলছেন, নরমালি ৫ হাজার নষ্ট হয়ই। এ বছর একটু বেশি হয়েছে। মেইন কারণ ওয়েদার, বেশি গরমের জন্য। চট্টগ্রাম ও সিলেটে একটু বেশি হয়েছে, ঢাকায় হয়নি। ন্যাশনাল অ্যাভারেজে ১০ হাজারের বেশি হয়নি।”
৩০ ট্রাক চামড়া ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর আসার কথা জানানো হলে শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন বলেন, “বিএনপি কিনে ফেলাইয়া দিছে, এ মুহূর্তে আমার আর বলার কিছু নেই।”
তিনি আরও বলেন, “চামড়া শিল্পের অগ্রযাত্রা সীমিত করার জন্য আমার মনে হয় একটি চক্র কাজ করছে।”
এবার চামড়ার দরপতনের পেছনে কারসাজি ছিল বলে দাবি তোলে বিএনপি। তারা বলছে, দেশের শিল্প ধ্বংসের উদ্দেশ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতেই এই কারসাজি করা হয়েছে। এবার ঈদে দরপতনের পর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সে বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, অবস্থা বুঝে রপ্তানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার আগের দিন বলেছিলেন, তারা বিদেশে কাঁচা চামড়া রপ্তানির বাজার ধরার চেষ্টা করছেন। তবে এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এখনও না পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমরা এখনও ভাসা ভাসা কথার ওপরে আছি। লিখিত কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমাদের রপ্তানির লাইসেন্স প্রয়োজন। যেসব দেশ কাঁচা চামড়া নেই, তাদের সঙ্গে আলাপ করা প্রয়োজন। ক্রেতা খুঁজতে হবে। অনেক প্রক্রিয়া আছে সেগুলো করতে হবে।”