‘চাপাচাপিতেও’ মান ভাঙেনি বিদ্রোহীদের

94

আওয়ামী লীগের কঠোর নির্দেশনা ও দফায় দফায় বৈঠকের পরেও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মান ভাঙেনি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন আজ। নাটকীয় কোনো সিদ্ধান্ত না হলে বর্তমান ১৮ কাউন্সিলরসহ প্রায় ৮৫ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকার সম্ভাবনা আছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও। তবে নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার ইন্ধনেই বিদ্রোহীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারে রাজি হচ্ছে না বলে নগরজুড়ে আলোচনা চলছে।
আজ মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দল মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে চট্টগ্রাম আসেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত না থাকলেও সার্কিট হাউজে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে সকালে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন। বিকেলে বর্ধিত সভায় চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন উপস্থিতি থাকবেন। কে.সি দে রোড়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে বর্ধিত সভায় উত্তর, দক্ষিণ ও নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সভায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার কথা থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কোনোরূপ সিদ্ধান্ত আসবে না বলেই জানা গেছে।
চসিক নির্বাচন সমন্বয়কারী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, ‘বিদ্রোহীরা দলের মনোনীত কেউ নন। মনোনয়নপত্র নেয়ার সময় জেনেশুনে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েও বিদ্রোহী হওয়া দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার সামিল। দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার স্বার্থে তাদের প্রত্যাহার করা উচিত। যদি কেউ প্রত্যাহার না করেন তাহলে তার দায় নিজেদেরকেই নিতে হবে।’
গতকাল শনিবার নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বৈঠকে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানান। নয়তো দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের দায় নিবেন না বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবার। এসব ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পাঁচটি ছাড়া বাকিসব ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে থাকায় কোণঠাসা অবস্থায় আছেন দলীয় প্রার্থীরা। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠেই আছেন ১৮ জন বর্তমান কাউন্সিলর। এছাড়াও প্রায় ওয়ার্ডে ২-৫ জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর দুইজন নেতা বলেন, সবাই জনপ্রতিনিধি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই বিদ্রোহী প্রার্থী। আর এসব প্রার্থীদের ইন্ধন দিচ্ছেন নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। নেতাদের ইন্ধনের কারণেই বিদ্রোহীদের সরাতে কেন্দ্রীয় নেতারাও ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় পদে না থাকায় বেপরোয়া আচরণ করছেন। তারা মনে করছেন দলীয় পদে যেহেতু নেই সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগও নেই। প্রকৃতপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইন্ধনদাতা কারা তা কেন্দ্রীয় নেতা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জানেন।
জানা যায়, কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন বঞ্চিতদের অধিকাংশই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুসারী। নাছির নিজেই মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপে থাকায় সুযোগটি ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তার প্রতিপক্ষরা। ইতোমধ্যে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়া নিয়ে যুবলীগের প্রতিনিধি সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন সিটি মেয়র নাছির। বাদ পড়া নাছির অনুসারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা সবাই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। বিদ্রোহীর তালিকায় আছেন ডা. আফসারুল আমিন, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খোরশেদ আলম সুজন ও আবদুচ ছালামের অনুসারীরাও।
নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আ জ ম নাছির অনুসারী বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে নয়। তারা মনোনয়নপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে বুঝাতে চান মনোনয়নের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। বিদ্রোহীদের মধ্যে কেউ কেউ মনোনয়ন বঞ্চিতের জন্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকেই দুষছেন। তারা চাইছেন না বিদ্রোহীদের প্রত্যাহারের মিশনে মোশাররফ হোসেন সফল হোক। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে এর প্রভাব আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থীর উপর পড়বে।
বর্ধিত সভা আজ : বিকেলে কেসিদে রোডস্থ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল উল আলম হানিফ এমপি। প্রধান বক্তা থাকবেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমদ হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা, সদস্যবৃন্দ, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যবৃন্দ, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং ওয়ার্ডের আওতাধীন ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহব্বায়ক, যুগ্ম আহব্বায়ক, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহব্বায়ক যুগ্ম আহব্বায়কদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন অনুরোধ জানিয়েছেন।