চাকসুর নির্বাচন দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত

53

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চাকসু নির্বাচন পরিচালনা বিষয়ক নীতিমালা আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার একটি নীতিমালা প্রণয়ণ কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি ও প্রক্টরিয়াল বডিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় চাকসু নির্বাচন এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত, সকল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, সকল ডিন ও প্রক্টরিয়াল বডিকে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত সভা ছিল। ওই সভায় চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে এর আগে নীতিমালা যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে আগামীকালই (বৃহস্পতিবার) একটি প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে ডাকসুর নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় ও সহাবস্থান নিশ্চিত করা হবে।
তফসিলের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি ইতিবাচকভাবে দেখছেন চাকসু নির্বাচনের বিষয়টি। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ সব প্রক্রিয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
ওই সভায় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী জানিয়েছেন, চাকসু ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর ছাত্রদের তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি, এরপর আগামী মাসেই নতুনভাবে আসন বরাদ্দের নোটিশ দেয়া হবে।
এদিকে চাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতিগত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন পূর্বদেশকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করছি, ডাকসুর আদলে উৎসবমুখর পরিবেশে চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ২৮ বছরের বন্ধ্যাত্ব কাটবে।
আবাসিক হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের দাবি জানিয়ে চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, আমরা নির্বাচনের বিষয়টি ইতিবাচক দেখছি। তবে ক্যাম্পাসে সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের মত যেন কারচুপি নির্বাচন না হয়, কেউ যেন আমাদের শিক্ষকদের চোর বলতে না পারে। অবশ্যই নির্বাচন পরিচালনার নীতিমালা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নের আগে সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে কথা বলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাই। আর নির্বাচনে যেন হত্যা মামলার আসামি ও বহিষ্কৃতরা যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে- এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
চবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা বলেন, প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে ঢাকসু নির্বাচনের ত্রæটিগুলো বিবেচনা করে প্রশাসন কাজ করবে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করবে। আর তফসিল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। আর কোন শিক্ষার্থী যেন হামলার শিকার না হন- এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানাই।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাস বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্র সংগঠনগুলো। নির্বাচনের দাবিতে, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর অভিযানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল।