চাকরি দেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা

36

পুলিশের এসআই, বন্দর, কাস্টম, প্রাইমারি শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ যেকোনো সরকারি চাকরি তার হতরে মুঠোয়। তিনি চাওয়া মাত্র চাকরি হয়ে যায়। বিনিময়ে দরকার টাকা। তার প্রভাব নেই এমন কোনো সরকারি দপ্তর নেই। কারণ তার ভাই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। অথচ সবই ভুয়া। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আজিজুল ইসলাম (২৮) নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এক আইনজীবীকে ২য় বিয়েও করেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, অবশেষে তিনি ধরা পড়লেন পুলিশের জালে। গত সোমবার রাতে কল্পলোক আবাসিক এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার হওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়ি পটিয়ার মনসা এলাকায়। তবে তিনি আইনজীবী দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় থাকতেন।
পুলিশ জানায়, আজিজ নিজেকে সদ্য অবসরে যাওয়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের ভাই পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে তিনি সরকারি চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিতেন বেকার যুবকদের। পুলিশের এসআই থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত যেকোনো পদে চাকরি দেয়া তার জন্য কোনো ব্যাপার না। বিষয়টি জানিয়ে দিতেন লোকজনকে। পদ অনুযায়ী টাকার চাহিদা দিতেন তিনি। মোট টাকার অর্ধেক আগে নিয়ে নিতেন। বাকি টাকা চাকরির পরে দেয়ার কথা বলা হত। কিন্তু কারো চাকরি হয়নি এ পর্যন্ত। টাকা ফেরত চাইলে মামলার হুমকি দিতেন আজিজ ও তার স্ত্রী।
জানা যায়, গ্রেপ্তারের পর মো. নাহিম হাসান নামে এক ভুক্তভোগী আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন থানায়।
মামলায় বলা হয়, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর নৈশপ্রহরীর কাজের পাশাপাশি ক্রিকেট খেলে সংসার চালান নাহিম হাসান। আজিজও এক সময়ে ক্রিকেট খেলার সুবাধে তার সাথে পরিচয় হয়। তবে আজিজকে তিনি চিনতেন ডাক্তার হিসেবে।
২০১৬ সালে কাস্টমসে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আজিজ তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে চাকরি দিতে না পারায় বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে সময় পার করতে থাকেন। গত বছর তাকে দুই লাখ টাকার চেক দিলেও ব্যাংকে গিয়ে তার একাউন্টে কোনো টাকা পাননি নাহিম। বিভিন্ন সময়ে টাকা চাইতে বাসায় গেলে তার আইনজীবী স্ত্রীও তাকে ধমক দিয়ে মামলার হুমকি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন নাহিম।
বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় কল্পলোক এলাকায় আজিজের কাছ টাকা চাইতে যান নাহিম। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে উল্টো হুমকি দিতে থাকেন। এসময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। চেঁচামেচি চিৎকারের এক পর্যায়ে লোক জড়ো হয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে আজিজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
তিনি জানান, তার আইনজীবী স্ত্রীর নামে ঢাকার একটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলে তা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের স্ত্রীর বলে প্রচার করতেন তিনি। নিজেকে ওই সচিবের ভাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন আজিজ। বন্দর, কাস্টমস, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুলিশের চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বের হয়ে আসে তার প্রতারণার অভিনব কৌশল।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, আজিজকে গ্রেপ্তারের পর অনেকেই থানায় যোগাযোগ করেছেন, যাদের কাছ থেকে তিনি সচিবের ভাই পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এক মহিলার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও তিনি আরও কয়েকজনের কাছ থেকে পুলিশে ও বন্দরে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন বলেও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে।
বাকলিয়া থানায় আজিজ জানান, তিনি আসলে শফিউল আলমকে কখনো দেখেননি। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে টাকা নিয়েছেন কয়েকজনের কাছ থেকে। তিনি পটিয়ার রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি পাস করে আর পড়াশোনা করেননি বলে জানান।