চাঁদা না দেওয়ায় যান চলাচল বন্ধ করে দিল ইউপিডিএফ

30

যাত্রীর অপেক্ষায় সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে রয়েছে সিএনজি ট্যাক্সিগুলো। কিন্তু কোনো যাত্রী ট্যাক্সিতে উঠবেন না। কিছু যাত্রী ট্যাক্সিতে উঠলেও তাদের জন্য নির্ধারণ করা আছে সীমারেখা। ট্যাক্সিসহ সব যানবাহন চলাচলে কাশখালী মসজিদ মার্কেটের ব্রিজ পর্যন্ত সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক ‘সশস্ত্র সংগঠন’ ইউপিডিএফ। এ সীমা অতিক্রম করলে সংগঠনটি গুলির হুমকিও দিয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ।
এ যেন ভিন্ন কোন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমানা বা নো মেনস ল্যান্ড। চালকরা চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাঙামাটির কাউখালী-বটতলী সড়কে এমন কান্ড ঘটায় ইউপিডিএফ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাউখালী সদর থেকে কাশখালী হয়ে দুর্গম বটতলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। পূর্বে কাশখালী মসজিদ মার্কেট এলাকা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও পরবর্তী রাস্তা সম্প্রসারণ হওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত সিএনজি ট্যাক্সিসহ অন্যান্য যান চলাচল শুরু করে। কিন্তু বছরের শুরু থেকে ইউপিডিএফ শ্রেণিভেদে প্রতি যানবাহনের জন্য চাঁদা নির্ধারণ করে দেয়।
এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি ট্যাক্সি চালকদের ডেকে নিয়ে গত দু’বছর ও চলতি বকেয়াসহ মাথাপিছু তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে বিশেষ টোকেন নিতে বলেন ইউপিডিএফ’র লোকজন। এতে চালকরা রাজা না হওয়ায় বটতলী সড়কে গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউপিডিএফ।
উপজেলা সদর থেকে কাশখালী মসজিদ মার্কেট বাঙালি পাড়া পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও উপজাতি যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। ভয় উপেক্ষা করে কাশখালী পর্যন্ত কিছু সিএনজি ট্যাক্সিতে উঠলেও আতঙ্কে থাকতে হয় যাত্রীদের।
ফলে সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তার পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। সপ্তাহিক হাটবারে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব অসহায় মানুষকে।
কাশখালী-বটতলী সড়কের সিএনজি চালক উচিংমং মারমা (৪০) জানান, সারাদিন গাড়ি চালিয়ে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। তাদের এহেন হটকারী সিদ্ধান্তে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
বটতলীর কৃষক চাইহ্লাঅং মারমা (৪৫) জানান, গাড়ি না থাকায় ভোর ৫টায় তরকারী নিয়ে পায়ে হেঁটে বাজারে এসেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে।
হাটহাজারীর একটি স্কুলে পড়ে বটতলীর মনু মারমা (১২)। সে জানায়, অনেকদিন পর বাড়ি এসেছি। পায়ে হেঁটে বাড়ি যেতে হবে শুনে কষ্ট হচ্ছে। তবুও যেতে হবে কিছু করার নেই। যাত্রী না থাকায় এ সড়কের শতাধিক সিএনজি চালকদের দিনভর বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।
চালক বেলাল জানান, সন্ধ্যা হলেই মালিকের গাড়ির ভাড়া পরিশোধ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অব্যাহত অভিযানে কোনঠাসা ইউপিডিএফ। গত দু’মাসে কাউখালীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নগদ টাকাসহ বেশ কয়জন ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজকে আটক করা হয়। এরপর থেকে চাঁদার উপর নির্ভর ইউপিডিএফ ‘মরণকামড়’ দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বছরে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ৫ আগস্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ী টাকা পরিশোধ করবে না, তাদের দোকানে কোন পাহাড়ি বাজার করতে বারণ করা হয়েছে। আতঙ্কিত পাহাড়িরা তাদের কথার বাইরে গেলে তালিকা করে করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
কাউখালী স্থানীয় ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাশখালী সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।