চাঁদাবাজি, দখল-উচ্ছেদ সবই চলে তার ইশারায়

72

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে তার বাস। জন্ম, বেড়ে ওঠা একই জায়গায়। আর সেখানেই দলবল নিয়ে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে, পাহাড় দখল, উচ্ছেদ থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই যা তিনি করেন না। ‘অনেক কাজের কাজী’ মো. হারুন ওরফে টেইলর হারুন (৩০) নামের ওই যুবক অবশেষে অস্ত্রসহ এখন পুলিশের জালে। ধরা পড়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তার নানা ‘কীর্তির’ কথা।
নগরীর আকবর শাহ থানার শাপলা আবাসিক এলাকার বড় টেক পাহাড় থেকে গত সোমবার গভীর রাতে হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। খবর বিডিনিউজের
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মির্জা সায়েম মাহমুদ জানান, শাপলা আবাসিক এলাকার বড় টেক পাহাড়ে আস্তানা করে চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে হারুন ও তার সহযোগীরা।
বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়ে সোমবার গভীর রাতে বড় টেক পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি, একটি পাইপগান, একটি কিরিচ, দুইটি লোহার পাইপ ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা সায়েম।
অভিযানে থাকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান জানান, হারুনের বাবা ফছি আলম ছিলেন শাপলা আবাসিক এলাকার একটি পাহাড়ের কেয়ার টেকার। হারুনের জন্ম ও বেড়ে ওঠাও ওই পাহাড়ি এলাকায়।
তিনি বলেন, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রম করে বেড়ায় সে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে অস্ত্রসহ হারুনকে গ্রেপ্তার করেছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। দেড় বছর জেল খেটে ২০১৮ সালের মে মাসে সে জামিনে বেরিয়ে আসে। এরপর সাহাবউদ্দিন, মিলন এবং সুমনসহ আরও কয়েকজন মিলে একটি বাহিনী গড়ে তোলে।
পুলিশ কর্মকর্তা ইলিয়াছ বলেন, বড়টেক পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ছাড়াও বেশকিছু সরকারি খাস জায়গা আছে। এসব জায়গায় গত কয়েক বছর ধরে প্লট তৈরি করে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে। মূলত এই জমি কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ নিতেই একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে হারুন।
মুজিবনগর, শাপলা আবাসিক এলাকা, বড়টেক পাহাড় এলাকায় জমি বেচাকেনায় হারুনের বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়। আবার কেনাবেচা করা সে জমির দখল নিতেও টাকা দিতে হয় হারুনকে।
কমিশনের বিনিময়ে হারুন জমি দখল করে দেয়। এছাড়া প্লট বা জমি কিনে বাড়ি বানানোর সময় ইট, বালুও হারুনের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে কিনতে হয়। তা না হলে তারা বাড়ি তুলতে বাধা দেয়।
ইলিয়াছ আরও বলেন, বড়টেক পাহাড়ের ঢালুতে ত্রিকোণাকৃতি একটি জায়গায় হারুনের একটি আস্তানা রয়েছে। সশস্ত্র পাহারায় থাকা আস্তানাটির অস্তিত্ব বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই।
সেখানে বসে হারুন মাদক সেবন ও টেলিফোনে চাঁদা দাবি করে পাহাড় কিংবা প্লট মালিকদের কাছ থেকে। পরে তার সহযোগীরা সেই চাঁদার টাকা সংগ্রহ করে। হারুনের এই ক্ষমতার উৎস এবং গডফাদারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
হারুনের দুই প্রধান সহযোগী সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে চারটি এবং মিলনের বিরুদ্ধে দুই মামলা আছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।