চল্লিশের পর ধীরে হাঁটা ‘দ্রুত বুড়ো হওয়ার লক্ষণ

24

চল্লিশ বছর বয়সে আপনি কত দ্রুত হাঁটতে পারেন, তা বলে দেবে আপনার মগজ এবং শরীরের বয়স কত দ্রুত বাড়ছে বা বাড়ছে না- এ খবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হাঁটার গতির ওপর সহজ এক পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা কতো দ্রুত বয়স বাড়ছে সেটা পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন।
যারা ধীরে হাঁটেন তারা যে শুধু তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যান তাই নয়, তাদের মুখও দেখায় বুড়োটে এবং তাদের মস্তিষ্কের আকৃতিও ছোট হয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক গবেষকদের দলটি বলেছে, তাদের এই গবেষণার ফলাফল দারুণ চমকপ্রদ। চিকিৎসকরা সাধারণত হাঁটার গতি ও ভঙ্গী দেখে কারো স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা বুঝতে পারেন, বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়স যাদের। কারণ হাঁটার গতিপ্রকৃতি থেকে মাংসপেশীর শক্তি, ফুসফুসের সুস্থতা, মেরুদন্ডের শক্তিএবং দৃষ্টিশক্তির উজ্জ্বলতা বোঝা যায়। বৃদ্ধ বয়সে হাঁটার গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগাযোগও করেছেন কোন কোন বিজ্ঞানী।
এই গবেষণা চালানো হয়েছে নিউজিল্যান্ডে এক হাজার লোকের ওপর। যাদের জন্ম ১৯৭০এর দশকে। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের সবরকম তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের হাঁটার গতিপ্রকৃতির ওপর পরীক্ষা চালানো হয় আরও আগে থেকে।
এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হতো, বিভিন্ন সময়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হতো এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্ক্যান করা হতো। তাদের শিশু বয়স থেকে প্রতি দুবছর অন্তর বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাশক্তির সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হতো।
এই গবেষণায় দেখা গেছে বৃদ্ধ বয়স হবার আগেই ধীরগতিতে হাঁটা সমস্যার প্রতি একটা ইঙ্গিত, বলছেন লন্ডনের কিংস কলেজ এবং আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক টেরি মফিট।
তিনি বলছেন, এমনকী ৪৫ বছর বয়সী যারা ধীরে হাঁটেন তাদের মধ্যেও হাঁটার গতিতে বিস্তর ফারাক দেখা যায়।
তবে তার কথায় মোদ্দা বিষয়টা হল, যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে যায় তাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াও তত দ্রুততা পায়। তাদের ফুসফুসের ক্ষমতা, দাঁতের অবস্থা এবং রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা যারা দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে খারাপ হয়ে যায়।
এই গবেষণায় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা হলো মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে দেখা গেছে যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে গেছে, তাদের মস্তিষ্কের বয়স তত বেশি বেড়ে গেছে।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, মাত্র তিন বছর বয়সে মানুষের বুদ্ধি, ভাষা ও স্নায়বিক দক্ষতা পরীক্ষা করে তারা নির্ধারণ করতে পারেন ৪৫ বছর বয়সে তাদের হাঁটার গতি কী হবে।
তারা বলছেন, চল্লিশের বেশি বয়সে যাদের হাঁটার গতি ধীর হয়ে যায়, শিশুকালে তাদের আই কিউ (বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি) যারা ৪৫ বছরেও দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে ১২ পয়েন্ট কম ছিল।
আন্তর্জাতিক গবেষক দল তাদের গবেষণা ফলাফলে লিখেছেন, স্বাস্থ্য এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্যের একটা কারণ শিশুকাল থেকে জীবনযাপনের মান। জীবনের শুরুতে যারা ভাল মানের জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা ও স্বাস্থ্যের ওপর তার একটা প্রভাব পড়েছে।
গবেষকরা বলছেন, অল্প বয়সে হাঁটার গতি পরিমাপ করে মানুষের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করার পদ্ধতি বা চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা সম্ভব। নিচু ক্যালরির খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার উপযোগিতা নিয়ে এখন গবেষণা চালানো হচ্ছে।
তারা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল বয়স কম এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় মানুষকে মস্তিষ্কের বয়স বাড়া বা সাধারণভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য জীবনযাপনের মান বদলানোর বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে সাহায্য করবে।