চলমান অভিযান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে

25

দেশব্যাপী আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনৈতিক কর্মকান্ড (ক্যাসিনো, মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, অবৈধ টেন্ডার বণ্টন) নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতারা।
চলমান অভিযানকে ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে তারা বলেন, এ অভিযান জনমনে সরকারের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করছে। ক্রীড়াঙ্গনে মদ, জুয়া, অবৈধ টেন্ডার, ব্যবসা-বাণিজ্য বণ্টনের মতো দুর্নীতির বিস্তার এবং ক্লাবগুলোর আর্থিক সংস্থানের জন্য জুয়ার আসর বসানো পুরো ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তারা আরও বলেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ মর্মে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মূলত সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, অনিয়ম দূর ও জবাবদিহিতার গুরুত্বকে বোঝায়। যা দেশবাসীকে আশান্বিত করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী আগেই দিয়েছিলেন। সম্প্রতি দলীয় পরিচয় ও পদের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান জনগণের সেই আস্থাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
গতকাল সোমবার ক্যাব চট্টগ্রামের নেতাদের পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।-খবর বাংলানিউজের
বিবৃতিতে বিভিন্ন মন্তব্য করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে বলা হয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রেক্ষিতে যে লোমহর্ষক চিত্র বের হয়ে আসছে, তা দুর্নীতি, সিন্ডিকেট ও অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র মাত্র। মূলত রাজনৈতিক মদদে ও রাজনৈতিক পরিচয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অনিয়ম, দুর্নীতির শেকড় নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এর পরিণাম আরও ভয়াবহ হবে। যা দেশের অর্থনীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নিজ দলের নেতাকর্মীদের এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপ জাতিকে ত্রাণকর্তা হিসেবে উদ্ধারে সহায়ক হবে।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক অনুপ্রবেশ, অনিয়ম, জুয়া ও টেন্ডার বণ্টনসহ যে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে তা দেশে সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায্য ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধক। একটা শ্রেণি অনিয়ম ও অপকর্ম করতে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বারবার ব্যবহার করছে। প্রশাসন অনেক জায়গায় নিরব দর্শক ছিলেন। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় ও ক্ষমতার অবস্থানকে পুঁজি করে জনস্বার্থের বিষয়গুলো জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের সম্পদ তৈরিতে রাজনৈতিক লাইসেন্সকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে ওই শ্রেণি।
আর এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে স্বাভাবিক রাজনৈতিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে এবং ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ, সুশাসন, জবাবদিহিতা হুমকির মুখে পড়বে। একইসঙ্গে দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহার দেশের সিন্ডিকেটের প্রসার করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
নেতারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে যে উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কিছু কিছু মিডিয়াতে এ ঘটনাগুলো প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এগুলো মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করেছে। চলমান এ অভিযানের ব্যাপ্তি ও প্রসার অন্যান্য খাত এবং পর্যায়ে বিস্তৃত করলেও একই চিত্র পাওয়া যাবে।
তাই, সরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাগত শুদ্ধাচার, নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষতা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দল নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে।
এছাড়াও প্রশাসনের সব পর্যায়কে নাগরিক পরিবীক্ষণের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তৃণমূলসহ সব পর্যায়ে নাগরিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় ওই বিবৃতিতে।