চলতি বছরই ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট

82

এ বছরই চালু হচ্ছে ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট। পাশাপাশি আগামী জুলাই থেকে চালু হবে ই-পাসপোর্ট। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কমিটির সভাপতি ফারুক খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক এবং নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন।
জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে আলোচনা চলছিল। প্রবাসী শ্রমিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করা হলে এতে পাতার সংখ্যাও বাড়বে। বর্তমানে পাসপোর্টে রয়েছে ৪৮ পাতা।
এদিকে গত বছর ই-পাসপোর্ট তৈরিতে জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদফতর। সোয়া তিন হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশকে ই-পাসপোর্ট ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহের কাজটি পেয়েছে জার্মান প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস।
এ বিষয়ে বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই বছরের মধ্যেই ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট চালু হবে। আর আগামী জুলাই থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হবে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সময়ে ই-পাসপোর্ট চালু করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। শুরুতে গত বছরের জুনে এবং অক্টোবর-নভেম্ববর থেকে এ পাসপোর্ট চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরবর্তীতে তা পিছিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে করা হয়। কিন্তু জানুয়ারিতেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ আগামি জুনে করার নিদ্ধান্ত থাকলেও আ্বারো পিছিয়ে জুলাইয়ে করা হয়।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জার্মানীর ভেরিডোস কোম্পানি তিন কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে। ঢাকার উত্তরায় বুকলেটের জন্য একটি অ্যাসেম্বলি কারখানা স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ডাটা সেন্টার ও একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার এবং অত্যাধুনিক পার্সোনালাইজেশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জার্মানিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি মূল্য তিন হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট ও এআইটি এক হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ২০৭ কোটি টাকা।
পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, ই-পাসপোর্ট মেয়াদ হবে বয়স ভেদে ১০ ও ৫ বছর। ১৮ বছরের নিচে বয়সিরা ৫ বছর মেয়াদি এবং ১৮ বছরের উপরের বয়সিরা পাবেন ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট। তবে তারা চাইলে ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে পারবেন। বর্তমানে চালু থাকা এমআরপি‘র তুলনায় ই-পাসপোর্টে খরচ বেশি হবে। ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট হবে ৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট হবে ৪৮ পৃষ্ঠার।
মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরকার ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রামের দু’টিসহ দেশের সব পাসপোর্ট অফিস থেকেই এধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে।
বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সরকার যখনই চালু করবে আমরা তখনই ইস্যু করবে। এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত এমআরপি চালু রয়েছে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে আমাদের অফিস থেকেও ইস্যু করা হবে।
চট্টগ্রামে দু’টি পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। একটি মনসুরাবাদ অপরটি পাঁচলাইশ। মনসুরাবাদ অফিস থেকে নগরীর বন্দর, ডবলমুরিং (সদরঘাট), পাহাড়তলী (আকবরশাহ), বায়েজিদ, খুলশী, পতেঙ্গা, হালিগহর এবং জেলার ভূজপুর, স›দ্বীপ মিরসরাই, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, রাউজান এলাকার বাসিন্দাদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। একইসাথে এ অফিস ভিসা প্রদানের কাজটিও করা হয়। আর পাঁচলাইশ অফিস থেকে বাঁশখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালী এবং নগরীর কোতোয়ালী, কর্ণফুলী, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও চকবাজার (পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালীর অংশ) এলাকার আবেদনকারীদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
জানা যায়, এরি মধ্যে চট্টগ্রামের দু’টি পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালকসহ কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কিভাবে এ পাসপোর্ট দেয়া হবে, গ্রহাকরা কি কি দেবে সবই প্রশিক্ষণে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সেজন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরে ওই কারখানা থেকে ই-পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখা হবে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জুলাইয়ে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করতে যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করেছে অধিদপ্তর। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।