চলছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

104

কর্ণফুলী নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত দুইদিনে ৮ একর ভূমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি-বেসরকারি একাধিক ভবন-গুদামও রয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর তীরে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বেশ কয়েকটি বড় বড় গুদাম ও ভবন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দখলমুক্ত করা হয় চার একর ভূমি।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে ‘আরব ঘাটে’র পাশেই নদীর পাড় দখল করে তৈরি করা একটি গ্রæপের গুদাম ভাঙার মধ্যদিয়ে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় ওই গুদামে সরকারি সংস্থার বিপুল সারের বস্তা থাকায় তাদের কিছু সময় দেয়া হয়। পরে পাশে আদম ঘাট এলাকার বেশ কিছু আধাপাকা ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে উচ্ছেদকারী দল নারিকেলতল এলাকায় নদীর তীরে তৈরি করা লবণের মিল উচ্ছেদ শুরু করে। এসব মিলের অধিকাংশ আধাপাকা ও কাঁচা স্থাপনা হলেও লবণ পরিশোধনের জন্য মাঠির নিচে করা বিশাল বিশাল পাকা হাউস উচ্ছেদ কাজে বিপত্তি দেখা দেয়। পরে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা এগিয়ে এলে সেসব স্থাপনাও গুড়িয়ে দেয়া হয় সহজে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গার সহকারী ভূমি কমিশনার তাহমিলুর রহমান জানান, দ্বিতীয় দিনে প্রায় ৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে চার একরের বেশি নদীর জায়গা উদ্ধার করা গেছে।
তাহমিলুর রহমান বলেন, কর্ণফুলীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান ফলপ্রসূ করতে আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। চাক্তাই থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত কর্ণফুলীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানকে তিন জোনে ভাগ করা হয়েছে। মোট ২১৮৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। প্রথম ধাপে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত দুইশ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অপর দু’টি জোনে উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অংশ নিচ্ছেন। অবৈধ স্থাপনা ভাঙার জন্য সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বুলডোজার, স্ক্যাভেটর, পে-লোডার, ট্রাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়েছে। ১০০ শ্রমিক উচ্ছেদ অভিযানে কাজ করছেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ৯০ দিনের মধ্যে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তো হয়নি, উপরন্তু অবৈধ দখলদাররা আরও বেশি আগ্রাসী হয় কর্ণফুলীকে ঘিরে। সে সময় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
গত বছরের ৩ জুলাই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়ন না করায় মেয়র, ডিসি, পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিডিএ চেয়ারম্যান, সচিব, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুল জারির পর জেলা প্রশাসক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশ জারি করেন। গত ২৮ জুলাই এই নোটিশ জারি করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে নিজ দায়িত্বে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বা ভেঙে ফেলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তালিকায় দেখা যায়, নগরীর পতেঙ্গা, ইপিজেড, বন্দর, কোতোয়ালী, বাকলিয়া ও চান্দগাঁও থানার আওতায় বাকলিয়া মৌজায় ৩৬৮টি এবং পূর্ব পতেঙ্গা মৌজায় ১৭৪৪টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। আদালতের রায় অনুসারে এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বা ভেঙে দেওয়া না হলে প্রশাসন তা ভেঙে দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিøষ্ট মালিকদের কাছ থেকে অপসারণের খরচ আদায় করা হবে।
কর্ণফুলী নদী চাক্তাই, রাজাখালী, বাকলিয়া এলাকায় বেশি দখল হয়েছে। এসব এলাকায় নদীর তীর দখল করে অন্তত ৭ হাজার বস্তিঘর গড়ে উঠেছে। বস্তিঘর ছাড়াও শুঁটকি আড়ত, মাছের খামার, মসজিদ, মন্দির, স্কুলসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলী নদী ভরাট করে এসব বস্তিঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ড্রেজিং কাজের ঠিকাদার জাফর আলম ও বাস্তুহারার জসিম কর্ণফুলী নদীর বিশাল জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বস্তি গড়ে তুলেছেন। কর্ণফুলীর অবৈধ জায়গা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন জসিম। অবৈধ দখলদারের তালিকায় তার নামে বেশি ঘর দখল রয়েছে বলে উল্লে­খ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসন কর্ণফুলী নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা চিহিৃত করে। সেসময় নদীর দুই তীরে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা ছিল। এরমধ্যে ছয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কন্টেইনার ডিপো। অবৈধ দখলদারদের তালিকায় জনপ্রতিনিধি, শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ীদের নামও রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দখলদার রয়েছে বাকলিয়া এলাকায়।