চরিত্র গঠনে সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ অপরিহার্য

121

নবী করিম (স.) বলছেন প্রত্যেক সন্তানই ফিতরাতের (দ্বীন বা সত্য কবুল করার যোগ্যতা) ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকেন। অতঃপর তার পিতা মাতা (নিজেদের বর্তমান চরিত্র দ্বারা) তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান করে দেয়। অথবা অগ্নি উপাসক করে দেয়।
মানব শিশু জন্মগ্রহণ করার পর যাদের পরিবেষ্টনে আবদ্ধ থাকে সেটি সেই শিশুর পরিবেশ বলা হয়। ছোট্ট এ গÐি বা বেষ্টনীর প্রধান দু’জন সদস্য হলো পিতা ও মাতা যাকে আমরা পরিবার বলি থাকি।
একটু ব্যপকারে বলতে গেলে এর সাথে দাদা-দাদী চাচা ও ফুফুকে সদস্য হিসাবে যোগ করতে পারি।
বয়স বৃদ্ধিও সাথে সাথে তার পরিবেশ ও সম্প্রসারণ ঘটে পরিবেশ প্রবভাব সম্পর্কে সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীগণ ব্যাপক গবেষণা ও আলোচনা করেছেন। রাসূল (স.) এর উল্লেখিত হাদিসখানার প্রতি গভীর মনোযোগ নিবদ্ধ করলে বুঝা যায় যে, তিনি কত বড় পরিবেশবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। পরিবেশ মানবশিশুর বিভিন্নমুখী আচারণ ব্যবহার ও দোষ গুণের উপর কার্যকারী প্রভাব বিস্তার করে। উল্লেখিত হাদিসে ফিতরাত বলতে দ্বীন বা সত্য ও ন্যায় তথা ইসলামকে কবুল করার যোগ্যতা ও মানসিকতাকে বুঝানো হয়েছে।
সকল শিশুই যোগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যে পরিবেশ বা পরিবারে সে জন্মগ্রহণ করছে সেটি যদি তার ফিতরতের অনুকূল হয়। তবে সে সত্য ও ন্যায়ের উপর টিকে থেকে তার সুকুমার বৃত্তিগুলোকে সুচারূপে প্রস্ফুটিত করতে পারে। আর পরিবেশ যদি বিপরীতমুখী হয় তবে তার চরিত্র বিপরীতমুখী ধাচেই গড়ে উঠবে। পারিবারিক পরিবেশ যদি শয়তানি চরিত্রের হয় সে পরিবেশ শয়তানের শিরোমনি হবে এটিই স্বাভাবিক পরিবেশ হলো একটি শিশুর জীবন গড়ার প্রাথমিক পাঠশালা এই পাঠশালার পাঠ্য তালিকায় যে ধরনের বই সিলেকশন করা হবে শিশুর জীবনের ভীত রচিত হবে সে সিলেবাসেরই ওপর। এ জন্য পরিবারের শক্তিশালী দুজন সদস্য পিতা ও মাতার গুরুত্ব অপরিসীম। পিতা-মাতা যে ধরনের আচারণ কথা-বার্তা ও কাজ-কর্ম করেন। ছেলে-মেয়ে সে সব অনুসরণ করতে শেখে। ছেলে-মেয়েরা তাদের জীবনের মডেল হিসাবে পিতা-মাতাকে গ্রহণ করে থাকে। তাই অনুকরণ প্রিয় শিশুর পিতা মাতা যদি ব্যক্তিগতভাবে সৎ আল্লাহ ভীরু ও ইসলামি অনুশাসনের পূর্ণ অনুসারী হন পারিবারিক পর্যায়ে আল্লাহর প্রদত্ত ও রাসূল (স.) প্রদর্শিত পন্থায় পরিবেশকে গডে তুলেন তাহলে তাদের সন্তানরা ও সেভাবে গড়ে উঠবে। ছেলে ও মেয়েদের নৈতিক চরিত্র গঠন করা পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা সুস্পষ্ট জুলুম হিসাবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তায়লা বলেন তোমাদের নিজেদের ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো, (আল কোরআন) রাসূল করিম (স.) বলছেন সুন্দর নৈতিক চরিত্র ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার চাইতে উত্তম কিছুই মা-বাপ সন্তানদের দান করতে পারে না। (তিরমিযী) আবু দাউদে বর্ণিত যে হযরত রাসূল করিম (স.) বলছেন, কোন বালকের সাত বৎসর বয়স হলেই তাকে নামাজের আদেশ দাও। আর দশ বৎসর বয়স হলে সে জন্য তাকে প্রহার করো ও বিছানা আলাদা করে দাও। প্রত্যক্ষ করুন আল কোরআনের সূরা লোকমানের এক জন আর্দশ পিতা তার ছেলেকে কিভাবে উপদেশ দিচ্ছিল সে বললো, হে পুত্র আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না যথার্থই শিরক অনেক বড় জুলুম। (সূরা লোকমান-১৩) পক্ষান্তরে এ দুজন যদি বিকৃত স্বভাব কুরুচি মনের অধিকারী হন। অধুনিক ও প্রগতিবাদী সাজার অভিপ্রায় নিয়ে পাশ্চাত্যের উশৃঙ্খল আচার-আচারণ কথা-বার্তা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে চালু করেন। তবে তাদের পরিবারটি পশুর খোয়াবে পরিণত হবে। সেখানে শ্রদ্ধাবোধ লজ্জা শরম প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার পরিবর্তে বেয়াদবী বেহায়াপনা অশ্লীলতা ও উশৃঙ্খলতা বেপকহারে চালু হবে। আদরের সন্তানটি চোখের সামনে মদ্যপ অথবা অপরিচিত মেয়ে মানুষ নিয়ে আসবে, অস্ত্রবাজ গুÐা-চিন্তাইকারী শখের বসে ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কু-কর্মধারা নিজেকে রাঙ্গাবার শখ জাগবে কারণ দিন-রাত নিজ পারিবারে এই দৃশ্য সে দেখে আসছে। ব্যর্থ প্রতিবাদী উশৃঙ্খল কিছু পিতা-মাতাতো এমনও রয়েছেন যে নিজেদেও কোমলমতি ও নিষ্পাপ ছেলেমেয়েদের নিয়ে একই সাথে একই সোফায় বসে দেশি-বিদেশি টিভির পর্দায় অশ্লীল মারদাঙ্গা ছবি দেখেন অথবা নর্থক-নর্থকীদের উলঙ্গ বা অর্ধউলঙ্গ নাচ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী ও কৃত্রিম যৌনচারণমূলক দশ্য তৃপ্ত সহকারে উপভোগ করে থাকেন। একটি শিশু বদমায়েশ ও দুশ্চরিত্র হিসাবে গড়ে উঠার জন্য যতগুলো উপকরণ প্রয়োজন সবকটির যোগান এই পিতামাতাই দিয়ে থাকে। ঘরের ৪ দেয়ালে নায়ক নায়েকাসহ বিভিন্ন প্রাণীর অশ্লীল ছবি টাঙিয়ে যৌন উত্তেজনা ব্যবস্থা করা হয়ে এর চেয়ে লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে ? রাসূল (স.) বলেছের তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না ১। যে ব্যক্তি পিতা-মাতার অবাধ্য ২। দায়্যুশ ৩। পুরুষসূলভ আচরণকারী নারী। এখানে দায়্যুশ বলতে বুঝানো হয়েছে পরিবারের মধ্যে অশ্লীলতা
ও পাপাচারের প্রশ্রয়দাতাকে এটিকে ঈমাম আজহারী তার কিতাবুল কাবায়ে গ্রন্থে কবিরা গুণাহ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিরমিযী শরিফের বর্ণিত রাসূল (স.) বলেছেন, নির্জ্জলতা ও অশ্লীলতা কোন বস্তুর কদর্যতাই বৃদ্ধি করে না। আর লজ্জা কোন জিনিকে সুন্দর করে। আবদুল্লাহ ইবনে আমের (র.) হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন রাসূল (স.) বলেন তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ। (রাবি বলেন) নবী করিম (স.) ও অশ্লীলবাসী ছিলেন না এবং অশ্লীলতার বান
ও করতেন না। (তিরমিযী)
বোখারী শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূল (স.) আরজ করেন, হে আল্লাহ রাসূল আমার ভাল ব্যবহার পাওয়ার সব চেয়ে বেশি অধিকারীকে তিনি বলে তোমার মা এভাবে ৩ বার মায়ের কথা বলার পর ৪র্থ বার পিতার কথা বলেন পিতা-মাতার সাথে সর্ম্পক ছিন্নকরাকে নবী করিম (স.) কবিরা গুণাহ হিসাবে গণ্য করেছেন। এছাড়াও আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে
ও রাসূল (স.) এর হাদিসের পিতা-মাতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করে সম্মানিত করা হয়েছে। তাই সকল পিতা-মাতাকে বলবো আপনার প্রাণপ্রিয় শিশুটিকে শত আল্লাহ ভীরু ও ইসলামি অনুশাসনের পূর্ণ আনুসারী হিসাবে গড়ে তুলার নিমিত্তে পারিবারিক পরিবেশে আল্লাহর প্রদত্ব ও রাসূল (স.) প্রর্দশিত প্রন্থায় সুস্থ বিনোদন ব্যবস্থা চালু করুন। আল্লাহ তাওফিক দিন আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক