চবির পাহাড়ে বিলুপ্তির পথে বন্যপ্রাণী

281

সত্তরের দশক থেকে ১৯৯৯ সাল। এ সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ে তিন প্রজাতির বানর, চিতা বাঘ, বন্য কুকুর, উল্লুক ও হনুমানের দেখা মিলতো হরহামেশাই। কিন্তু এখন এসব প্রাণীর দেখা মিলে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভেতরে কয়েকটি পাহাড়ে তিন প্রজাতির বানরের আধিক্য ছিলো। লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, পিগটেল বানর দাপিয়ে বেড়াতো পুরো ক্যাম্পাস। কিন্তু এখন এসব বানর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এমনকি ২০১০ সালের আগেও ক্যাম্পাসে হরিণের বিচরণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। এই প্রাণীও এখন দেখা যায়না।
২০০৮ সালে প্রকাশিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী এখানে ২৭ প্রজাতির প্রাণীর কথা জানা গেলেও এখন মাত্র ১৫টি প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। বাকি ১২ প্রজাতির প্রাণীই বিলুপ্ত।
দেশে পাওয়া ৫০ প্রজাতির ব্যাঙের মধ্যে ৩০ প্রজাতিই পাওয়া যায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন একটি প্রজাতি ‘বাংলাদেশি ঝিঝি ব্যাঙ’ আবিষ্কার করে খ্যাতি পেয়েছিলেন চবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আলী হাওলাদার। পৃথিবীর বিরল ‘তাইপে’ প্রজাতির ব্যাঙেরও অস্তিত্ব রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মো. ওমর ফারুক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি। ১৫ বছর আগেও চিতা বাঘ দেখেছি। ভোরে দেখা মিলতো হরিণের। কিন্তু এসব প্রাণী এখন আর দেখা যায় না। খবর বাংলানিউজের
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ আসমত বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রাণীর জন্য ‘সুপার হট স্পট’। কারণ, ছোট্ট এ জায়গায় যে পরিমাণ প্রাণী বসবাস করে-তা অবিশ্বাস্য। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বেশিরভাগ প্রজাতির প্রাণী এখন বিলুপ্তির পথে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়গুলো সীতাকুন্ডের পাহাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত। এখানে যে পরিমাণ সম্পদ আছে তা কল্পনার বাইরে। কিন্তু এসব সম্পদ রক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই, বরং ধ্বংস করা হচ্ছে।
প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে এই প্রাণিবিজ্ঞানী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। নতুন নতুন স্থাপনার জন্য গাছ ও পাহাড়ি বনের অংশবিশেষ কাটা হচ্ছে। অথচ এই গাছগুলোই প্রাণীর আবাসস্থল। এছাড়া ক্যাম্পাসে যে পরিমাণ সিএনজি অটোরিকশা, বাস, গাড়ি চলাচল করে; এসব যানবাহন থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
সরকার উদ্যোগ নিলে এসব প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন গাজী সৈয়দ আসমত।