চবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে রাতভর সংঘর্ষ

65

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম রসূল নিশানকে অপহরণ ও মারধর করা হয়েছে-এমন খবরে রাতভর সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত আট নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ-উত্তেজনা চলে। এ সময় ৮টি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর রেশ ধরে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসজুড়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আহতরা হলেন-শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অর্ণব ইসলাম, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ধ্রæব, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অভয়, আরবী বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ ইমাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আনিস মাহমুদ, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দ করিম মুগ্ধ এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. রফিক। এদের মধ্যে আঘাত গুরুতর হওয়ায় অর্ণব ও ধ্রæবসহ তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চবি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক টিপু সুলতান। তিনি বলেন, তাদের চোখে ও মুখে কাঁচের বোতল ও ইটের আঘাত ছিল। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে নগরীর লালখান বাজারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপুর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় রাতে গোলাম রসূল নিশানকে অপহরণ ও মারধর করা হয়েছে বলে ক্যাম্পাসে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তার অনুসারী ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ‘উল্কা’ গ্রæপের কর্মীরা। এ ঘটনায় তারা ছাত্রলীগের ‘সিক্সটি নাইন’ গ্রæপের নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। যদিও এক ঘণ্টা পর তাকে টাইগারপাস এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়ে বলে জানায় তার অনুসারীরা। এ নিয়ে এক পর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের দু’টি গ্রæপ উল্কা ও সিক্সটি নাইন। এসময় ভিএক্স ও একাকার গ্রুপের নেতাকর্মীরাও উল্কার পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। রাতভর দফায় দফায় এ সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। এসময় ৮টি ককটেল ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। ইট-পাটকেল ও বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে সোহরাওয়ার্দী হল মোড় পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিবদমান দলগুলো নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শনিবার সকাল থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান নেয়।
এদিকে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১১ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন চবি ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসূল নিশান। চমেক পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দিন বলেন, তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তিনি সুস্থ আছেন। তবে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হলেও তারা পুলিশকে বিস্তারিত কিছুই জানাননি।
এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসূল নিশানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়নি। পরে ভিএক্স গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল বলেন, সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপুর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে যাওয়ার পথে লালখান বাজার এলাকায় সাবেক সহসভাপতি গোলাম নিশান রসুলকে ন্যাক্কারজনকভাবে অপহরণ করে মারধর করে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে টাইগারপাস এলাকা থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মীরা মূল ফটকে তালা দেয় ও কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সিনিয়র নেতারা সকলকে হলে পাঠিয়ে দেয়।আমরা এ ঘটনার বিচার চাই এবং শীঘ্রই জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করব।
তবে অপহরণের ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ আখ্যা দিয়ে সিক্সটি নাইন গ্রæপের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ বলেন, এ ঘটনার সাথে আমাদের কোন নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে জামাত-শিবিরের স্টাইলে এক নেতাকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর রাতের আঁধারে হামলা করা হয়েছে। গোয়ন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকলে এ বিষয়ে অবগত কোন অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও জানাবো এবং হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিব।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকতারুজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রাতে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না।