চন্দ্রঘোনা কেআরসি স্কুলের ১০ শিক্ষকের মানবেতর জীবন

100

মানুষ গড়ার দায়িত্ব পালন করছেন যে শিক্ষক আজ তাঁরাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনার কেআরসি উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক নানা সংকটে পড়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেআরসি স্কুলের শিক্ষকরা নিষ্ঠার সাথে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। কেআরসি স্কুলে লেখাপড়া শিখে অনেক ছাত্রছাত্রী বর্তমানে সরকারি বেসরকারি সংস্থায় বিভিন্ন উচ্চপদে কর্মরত আছেন। যাঁদের হাত ধরে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া শিখে আজ মানুষ হয়েছেন, জীবনে সচ্ছলতা পেয়েছে সেই স্কুলের শিক্ষকরা বর্তমানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে শিক্ষকরা দিনের পর দিন কষ্টে জীবন যাপন করছেন। কেআরসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি কোন হাইস্কুলের শিক্ষকরা ১৫ হাজার টাকার কম বেতন পান না। আর প্রধান শিক্ষক ২৫ হাজার টাকার কম বেতন পাননা। কিন্তু কেআরসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আলম বলেন, তিনি মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন পান। স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন মাত্র তিন হাজার টাকা। তারমধ্যে বর্তমানে শিক্ষকদের তিন মাস বেতন বাকী পড়ে আছে। এ অবস্থায় জীবন আর চলছে না। শিক্ষকরা জানান, কেআরসি স্কুল এমপিও ভুক্ত হবে এই আশায় আমরা বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছি। রাঙ্গামাটি ২৯৯ আসনের সাংসদ দীপংকর তালুকদার দীর্ঘ দিন থেকে আমাদের আশ্বাস দিয়ে আসছেন তিনি কেআরসি স্কুলকে এমপিও ভুক্ত করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তার চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে বলে দীপংকর তালুকদার কথা দিয়েছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে বছরের পর বছর কেটে গেছে কেআরসি স্কুল এমপিও ভুক্ত হচ্ছেনা। কেআরসি স্কুলের সকল শিক্ষক এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন স্কুল এমপিও ভুক্ত হবে এবং তাঁদের কষ্টের অবসান ঘটবে। প্রধান শিক্ষক বলেন, কেআরসি স্কুলে বর্তমানে প্রায় ৪শ ছাত্র-ছাত্রী আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী অত্যন্ত গরীব। বাসা বাড়িতে কাজ করেন, রিকশা ও ঠেলা গাড়ি চালান, অটোরিকশা চালান এরকম পরিবারের সন্তানরাই কেআরসি স্কুলে লেখাপড়া করছে। গরিব হবার কারণে এসব শিক্ষার্থীরা মাসিক বেতনও দিতে পারছেনা। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন হিসেবে যে অর্থ আদায় করা হয় সেটাই শিক্ষকরা মাসিক বেতন হিসেবে গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে সাংসদ দীপংকর তালুকদার কিছু অর্থ বরাদ্ধ দেন। তা দিয়ে শিক্ষকদের বেতন প্রদানসহ স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। আর কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, বিদ্যুৎ এবং পানি পাওয়া যাচ্ছে। কেআরসি স্কুলের শিক্ষকরা জানান এমনিতেই আমরা পাচ্ছি নাম মাত্র বেতন সেটাই বর্তমানে তিন মাস বাকি পড়ে আছে। তারপরও আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। স্কুলের বার্ষিক খেলাধুলা ও পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষা সফর, জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও শিশু দিবস পালন, মহান স্বাধীনতা দিবস এবং মহান বিজয় দিবসসহ জাতীয় সকল কার্যক্রম আমরা যথাযথভাবে পালন করে আসছি। তিনি শিক্ষকদের দুর্দশা লাঘব করার জন্য অনতিবিলম্বে কেআরসি স্কুলকে এমপিওভুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সংস্থার প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন।