চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীতে কবে হবে স্বপ্নের সেতু

248

রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীতে ফেরি পারাপারে জন দুর্ভোগের শেষ নেই। সাথে সময়ের অপচয়। ফেরিতে নানা দুর্ঘটনা ও মৃত্যুও তালিকা দীর্ঘ হলেও সরকারের টনক নড়ছেনা। নদীতে সেতু হবে বলে বছরের পর বছর পার হলেও নদীতে স্বপ্নের সেতু হওয়ার কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। প্রতিদিন শত শত যানবাহন এই ফেরি দিয়ে চলাচল করে। ফেরি পার হওয়ার সময় তারা হতাশা প্রকাশ করেন। হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সদ ইচ্ছার অভাবে এখানে সেতু নির্মানের উদ্যোগ নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাইয়ের সিমান্ত এলাকা হওয়ায় দু পক্ষের জন প্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ নীরভ রয়েছে। সেতু হলে বদলে যাবে দুই এলাকার সার্বিক চিত্র। জীবন মান বাড়বে। দ্রæত গতিতে যানবাহন ও মানুষের চলাচল এবং ব্যবসা বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে। বাড়বে সরকারে রাজস্ব। জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, রাজস্থলী এবং কাপ্তাই উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগের জন্য প্রধান মাধ্যম হলো চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান ফেরিঘাট। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগের জন্য এ ফেরি অন্যতম। সারা পথ নিরাপদে আসতে পারলেও লিচুবাগান ফেরিঘাটের কাছে এলেই সবাইকে থমকে যেতে হয়। ফেরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে অনেক জরুরি কাজেও সহজে যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সর্বস্তরের জনগণ। একটু ভারি বৃষ্টি হলে ফেরির পন্টুন পানিতে ডুবে যায়। তখন অনেক সময় দিনের পর দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। দুপারের যোগাযোগ অনেকটা বির্প্যস্ত হয়ে পড়ে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলে নৌকা সাম্পান করে পার হতে হয়। এ আর এক দুর্ভোগ। একটি সুত্র জানায়, বর্তমানে ফেরিতে সরকারের রাজস্ব নাম মাত্র। সেতু হলে সরকারের রাজস্ব তিন গুন বাড়বে। এক বছরের রাজস্ব দিয়ে সরকারের নির্মানকৃত সেতুর অনেকটা বরাদ্ধ উঠে আসবে। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে অবস্থিত রাঙামাটি জেলার একমাত্র পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। এই গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন জানান, লিচুবাগনে কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু না থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। তিনি বলেন, গবেষণার কাজে জরুরি প্রয়োাজনে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু ফেরির কারণে তাদের সহজ যাতায়াত সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভক্ত করে রেখেছে লিচুাবাগান ফেরিঘাট। এই ফেরিঘাটে যদি একটি সেতু থাকত তাহলে এলাকার জীবন মান বৃদ্ধি পেত। রাঙ্গুনিয়াÑরাজস্বলী কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির দায়িত্বে মো. কামাল জানান, প্রতিদিন শত যানবাহন এ ফেরি দিয়ে পার হতে হয়। আমাদের পারমিটের কাঠ বোঝাই ট্রাক পার হতে হয়। এখানে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ দুর্ভোগ আর হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে হলে এ খানে সেতু নির্মানের বিকল্প নেই্। এতদ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরির্বতন আসবে সেতু হলে। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম (৫১) জানান, প্রতি বছর ফেরি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ফেরি থেকে পড়ে গিয়ে অনেককে প্রান হারাতে হয়েছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে এখানে জরুরি ভাবে সেতু নির্মানের প্রয়োজন। চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আশরাফ আহমেদ জানান, চন্দ্রঘোনা থানায় মোটামুটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। কিন্তু লিচুবাগান ফেরিঘাটে সেতু না থাকায় অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে নিরাপত্তা টহল দেওয়া সম্ভব হয় না। লিচুবাগান ফেরিঘাটে অবিলম্বে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানান। রাঙ্গুনিয়া থানার উপ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জুয়েল জানান, আমাদের প্রতিনিয়ত রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ও পদুয়া শিলক ইউনিয়নে যেতে আমাদেও ফেরি পার হতে হয়। আসামি আটকের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা সৃষ্টি কওে এ ফেরিটি। এখানে জরুরি সময়ে ফেরির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কাপ্তাই উপজেলার ২নং রাইখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক জানান, রাঙামাটি বান্দরবান সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়ে সাধারণ যানবান চলাচলের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর গাড়ি নিয়মিত চলাচল করে।
রাজস্থলীতে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট রয়েছে। সেনা সদস্যদের প্রতিদিন একাধিকবার রাজস্থলী সেনা ইউনিটে যাতায়াত করতে দেখা যায়। কিন্তু লিচুবাগান ফেরিঘাটের কাছে আসার পর অন্য সবার মতো তাদেরও থমকে যেতে হয়। এখানে একটি সেতু থাকলে মানুষ উপকৃত হতো। বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে যাত্রীবাহী বাসের চালক আবুল হাশেম (৪৫) জানান, লিচুবাগান ফেরিঘাটের কারণে প্রতি ট্রিপে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট সময় নষ্ট করতে হয়। আবার ভারী বৃষ্টি হলে ফেরির পন্টুন পানিতে ডুবে যায়। তখন অনেক সময় দিনের পর দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, দুই উপজেলার যাতায়তের জন্য নদীতে সেতু হওয়া জরুরি। শুনেছি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে।