চন্দনাইশ শঙ্খ নদীর চৌকিদার  ফাঁড়ি ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে

111
চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খনদীর চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ২০০১ সালের ১৫ মে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান চৌকিদার ফাঁড়ি ব্রিজঘাটে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। এলাকার মানুষ তাঁর প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন চাই। অবশেষে সে প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ২০০১ সালে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৫ মে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান দোহাজারী লালুটিয়াতে সফরে এসে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের কারণে সে প্রতিশ্রæতি আর বাস্তবায়ন হয়নি। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য দুই থেকে আড়াই’শ মিটারের অধিক হবে বলে জানা যায়। মোগল আমল থেকে দোহাজারী ভারত উপমহাদেশের একটি দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দোহাজারীর চাগাচর গ্রাম থেকে চৌকিদার ফাঁড়ির পশ্চিমাংশ পর্যন্ত এলাকা জুড়ে মোগল ও ব্রিটিশের অনেক নিদর্শন এখনো বিদ্যমান। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল আমলে আরকান রাজ্য জয় থেকে শুরু করে জাপান, ব্রিটিশ মধ্যকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত দোহাজারী পালন করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা। সে ঐতিহাসিক চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় শঙ্খনদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ এখন সময়ের দাবী। এ ব্রিজটি নির্মাণ হলে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের জনগণের। উপজেলার সীমান্তবর্তী শঙ্খনদীর উপর চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ হলে এ এলাকার লোকজনের সাথে দোহাজারীর দূরত্ব অনেক কমে যাবে। সে সাথে এসব এলাকার উৎপাদিত সবজি ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করে কৃষকেরা উপকৃত হবে। এ এলাকার জনগণের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। এ ব্রিজটি নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাট। ঘাটের উপর পাশে সাতকানিয়ার পুরানগড় নয়াহাট, বাজালিয়ার বোমাংহাট ও বিশ্বেরহাট। উভয় এলাকার হাজার হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু চলাচলের জন্য কোন ব্রিজ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার এ এলাকার মানুষ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে যাতায়াত করা অসাধ্য হয়ে পড়ে, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার অংশ বিশেষের হাজার হাজার লোকজন বান্দরবান সড়ক হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যাতায়াত করে থাকে। এসব এলাকার লোকজনকে দোহাজারী যেতে হলে সেখানে শঙ্খনদী পার হয়ে গেলেই সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। অথচ বান্দরবান সড়ক হয়ে কেরানীহাট অতিক্রম করে আসতে সময় লাগে এক ঘন্টারও বেশি। উভয় সীমান্তে সড়ক ব্যবস্থা অনেক উন্নত। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে না কোনভাবে। ব্রিজটি নির্মাণ হলে এসব এলাকার লোকজনদের সময় ও দূরত্ব অনেক কমে আসবে। উভয় পাড়ের সাধারণ মানুষ, ক্রেতা-বিক্রেতারা হাট-বাজারে যাচ্ছে নানা প্রয়োজনে। দোহাজারী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসছে প্রতিনিয়ত। এ এলাকার তরি-তরকারি, রবি শষ্য, মৌসুমী ফল আনারস, কাঁঠাল, কলা, হলুদ, আদা ও বিভিন্ন জাতের কাঁচামাল জীপ ও ট্রাকে করে নিয়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে দ্রæত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম। উপজেলার সীমান্তবর্তী শঙ্খনদীর চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ হলে উপজেলার উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে নিঃসন্দেহে। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইতিপূর্বে ব্রিজ নির্মাণের খসড়া ফ্ল্যান তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা একটি প্রতিনিধি দল ব্রিজ নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় ব্রীজ নির্মাণ অনুভব করে ইতিমধ্যে কয়েক দফা পরিদর্শন করেন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরির্দশনকালে তিনি চৌকিদার  ফাঁড়ি এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ সময়ের দাবী বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ব্রীজটি নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট, ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ টিম পর্যবেক্ষণ করে মতামত ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের প্রতিশ্রæতি প্রতিফলনের জন্য বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে জানা যায়।