চন্দনাইশে শুক্লাম্বর দীঘি মেলায় পুণ্যার্থীদের ঢল

133

চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ঐতিহ্যবাহী শুক্লাম্বর দীঘি মেলায় পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। পূর্ণার্থীরা তাদের সাধ্যমত ছাগল, কবুতর, গাভীর দুধ, স্বর্ণালংকার দান ও প্রসাদ বিতরণ করেছেন। পৌষ সংক্রান্তির শেষে গতকাল মঙ্গলবার মাঘ মাসের প্রথমদিন এ মেলা বসে। এসময় মনবাসনা পূরণ করতে ভক্তরা শুক্লাম্বর দীঘির পাড়ে জড় হন।
সূত্র জানায়, চন্দনাইশ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বরমা বাইনজুরী গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী শুক্লাম্বর দীঘি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। যারা এ দীঘিতে মানত করে তাদের মনবাসনা পূরণ হয় বলে ধারণা তাদের। প্রতিবছর ১ মাঘ এ দীঘিকে কেন্দ্র করে বিশাল মেলা বসে। এ মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটান থেকেও আসেন সনাতন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মেলার দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূর্ণার্থীদের ঢল নামে।
জানা যায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নদীয়া থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য আসা শুক্লাম্বর ভট্টাচার্যের ধর্মীয় দেশনা স্থান হিসেবে প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে শুক্লাম্বর ভট্টাচার্যের নামে এ মেলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রয়াত নিত্যানন্দ বৈলয়। শুক্লাম্বর দীঘিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে দীঘির পাড়ে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় পার্শ্ববর্তী ভারত, ভুটান ও নেপালসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন মানত নিয়ে এ পীঠ মন্দিরে আসেন। মেলা ছাড়াও সারা বছরজুড়েই পূর্ণার্থীদের এ পীঠমন্দিরে আসতে দেখা যায়। তবে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পূর্ণার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য এ দীঘির পাড়ে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। দীর্ঘদিন ধ্যান মগ্নে থাকার পর প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে তিনি ইহ জগত ত্যাগ করলে, তাকে এ দীঘির পাড়ে সমাহিত করা হয়। তার সমাহিত স্থানে একটি অশ্বথ বৃক্ষ বিশাল জায়গা জুড়ে স্মৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পূজারীরা মনবাসনা পূর্ণের আশায় এ অশ্বথ বৃক্ষের ডালে সুঁতা বাঁধে দেন এবং কবুতর ছেড়ে দেন। মন্দিরের জন্য মানত করা শত শত ছাগল বলী দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন পূজনীয় দান মন্দিরে উৎসর্গ করা হয়। তাছাড়া দীঘিতে মেলার দিনসহ বিভিন্ন সময়ে গাভীর দুধ ঢেলে এবং স্নান করে তাদের মনবাসনা পূরণের জন্য। দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি শিবমন্দির রয়েছে। যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলারা তাদের সন্তান-সন্ততীর জন্য মানত করে পূজা দেয়। এই পূজো দিলে মনবাসনা পূরণ হয় বলেও তাদের বিশ্বাস রয়েছে।
মেলায় আসা পূর্ণার্থীদের মনবাসনা পূরণ হয় বলে জানান অনেক পূজারীরা। এছাড়া সারা বছর প্রতিদিন বিভিন্ন মানত নিয়ে পূরণের লক্ষ্যে দীঘিতে দুধ, ছাগল, কবুতর, ফল-ফলাদি উৎসর্গ করে থাকেন। তাদের মতে দীঘির পানিতে উৎসর্গকৃত দুধ পানির সঙ্গে না মিশে তলদেশে চলে যায়। তাছাড়া একসময় ছেলে-মেয়েদের বিয়ের জন্য আবেদন জানালে বিয়ের সকল সরঞ্জাম দীঘিতে ভেসে উঠার অনেক গল্প-কাহিনীও রয়েছে এ দীঘিকে ঘিরে। এখানে দুধ, ছাগল, কবুতর এমনকি সোনার অলংকার উৎসর্গ করলে মনের সব বাসনা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস তাদের। আর তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার সনাতন ধর্মের মানুষ নানা রকম বাসনা নিয়ে শুক্লাম্বর দীঘির পাড়ের পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত এ মিলন মেলায় জড় হন।
দিনব্যাপী চলে পূজা-উৎসব। সে সাথে প্রত্যেকে স্ব-স্ব ধ্যানে-জ্ঞানে মগ্ন থাকে পূজা অর্চনায়। পূর্ণার্থীদের ভিড়ে এ দিন উৎসবমুখর থাকে দীঘির চারপাশ। মেলায় আসা পূণার্থীদের পুরুষ-মহিলা একসাথে দীঘির চারপাশে প্রায় ১০টি ঘাটে স্নান করার দৃশ্য লক্ষ্যণীয়। এরই সাথে অশ্বথ বৃক্ষে অবস্থান করা শত শত কবুতর সবার নজর কাড়ে। একইভাবে পূণার্থীদের দানের পাহাড় পড়ে যায় এ পীঠমন্দিরে। যা ব্যবহার করে মন্দিরের পরিচালনা পরিষদ মন্দির সংস্কার ও নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। বর্তমানে এ পীঠ মন্দির নির্মাণের জন্য ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাছাড়া পীঠ মন্দিরকে ঘিরে বাউন্ডারি ওয়াল, ঘাট-সহ অন্যান্য খাতে আরো ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।