চন্দনাইশে বন্যায় লন্ডভন্ড সড়ক

46

চন্দনাইশে গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সড়ক, কৃষি, সবজি, মৎস্য প্রকল্প, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্টা, ব্রিজ-কালবার্ট সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ২০ টাকার অধিক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। সূত্র মতে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে সড়ক, উপ-সড়ক, ব্রিজ-কালভার্টের এপ্রোচ সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য প্রজেক্ট, পুকুর, কাঁচা বসতঘর বন্যার পানিতে বিলীন হয়ে যায়। উপজেলার চন্দনাইশ, দোহাজারী পৌরসভা, বরকল, বরমা, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, দোহাজারী, ধোপাছড়ি, হাশিমপুর, কাঞ্চননগর, জোয়ারা এলাকার হাজার হাজার মানুষ বন্যার শিকার হয়। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শস্যভান্ডারখ্যাত দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী হাজার হাজার একর সবজিক্ষেত। এছাড়াও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, আউশ ধান, পানের বরজ, মুরগীর খামার, মৎস্য প্রজেক্ট ও অসংখ্য দোকান-পাট। সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার দু’টি পৌরসভা, ৮টি ইউনিয়নে ১’শ ২০ গ্রামের ৮ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ৩০ হাজার পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে ৪০ হাজার মানুষ সম্পূর্ণ ক্ষতির শিকার হয়েছে। ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৮’শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৫ হাজার আংশিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১’শ হেক্টর ধানি জমি সম্পূর্ণ, ২’শ ৩ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্টান সম্পূর্ণ ও ৭৬টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৮ কি:মি: এর বেশি সড়ক সম্পূর্ণ, ৩০ কি:মি: আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১০ টি ব্রিজ কালবার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সে সাথে বাঁধ আধা কি:মি: সম্পূর্ণ, ২.৫ কি:মি: আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চন্দনাইশে ৩ হাজার মৎস্য পুকুর দিঘীর মধ্যে ৩ হাজার ২’শ মেট্রিক টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যায়। এতে ক্ষয়-ক্ষতি ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকার মাছ, ৫০ লক্ষ টাকার পোনা, ৩০ লক্ষ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ ৪ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। চন্দনাইশে গত বন্যায় ১’শ ৫০ একর চারনভূমি, ১’শ ২৫ একর নেপিয়ার, পাকচন, জার্মান পারা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গৌ খাদ্য সংকটে রয়েছে খামারীরা। ৪’শ টি টিউবওয়েল বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানি পানে সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। চন্দনাইশে ৭টি সাইক্লোন সেল্টারে ২ হাজারের অধিক লোক অবস্থান নেয়। বন্যা চলাকালীন ১৬ টি টিম চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিল। শতাধিক কাঁচা বসতঘর পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। চন্দনাইশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয়ের অধিনে চলতি অর্থবছরে উপজেলায় কাবিখা’র প্রকল্পের সড়ক, ব্রিজ-কালবার্ড টানা অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সদ্য নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যায়। এছাড়া অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসুচির আওতায় প্রকল্প (১ম ও ২য় পর্যায়) কাঁচা রাস্তা নির্মাণের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মস‚চি (এডিপি) এর গ্রামীণ রাস্তা ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রকল্পগুলো পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম বদরুদ্দোজা উপরে উল্লেখিত তথ্যবলী প্রতিবেদন আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন সম্প্রতি বন্যায় উপজেলার নি¤œাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও কাঁচা রাস্তা, মৎস্য প্রজেক্ট, আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা, সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রসাশনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষনিক মনিটরিং করে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বন্যার্থদের মাঝে সরকারি সাহায্য যথাযথভাবে পৌছানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।