চন্দনাইশে উৎপাদিত শসার কদর বাড়ে রমজান মাসে

172

রমজান এলেই ইফতারীর সাথে খিরা বা শসার স্থান নিজেরাই করে নেয়। চলতি মৌসুমে চন্দনাইশের শঙ্খনদীর তীরবর্তী এলাকায় খিরা ও শসার ভাল ফলন হয়েছে। রমজানের কারণে কৃষকেরা দামও ভাল পাচ্ছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়া শঙ্খনদী তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে এ মৌসুমে শসা উৎপাদন হয়। পাশাপাশি বাঁশখালী, লোহাগাড়া অঞ্চলের কৃষি জমি ও পাহাড়ী অঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রচুর শসা উৎপাদিত হয়েছে। শসা এশিয়া, ইউরোপ সহ বিশ্বের অত্যন্ত একটি জনপ্রিয় ফসল। এটি কিউকারবেটিসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি ফসল। বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত বেশি। আমাদের দেশে শসা ও খিরার ছালাত হিসেবে ব্যবহারের একক জনপ্রিয়তা আছে। এছাড়াও সবজি হিসেবে তরকারির সঙ্গে এর ব্যবহার রয়েছে। পানি ও সেচ নিকাশ সুবিধাযুক্ত উঁচু দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মটিতে খিরা ও শসার চাষ ভাল হয়। ৪/৫টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হয়। শসা ও খিরা একটি নিবিড় পরিচর্যাকারী শস্য। স্থানীয়ভাবে খিরা ও শসার বিভিন্ন জাত লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় উত্তম ফলন দেয়। যা আমাদের দেশে ভারী কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতগুলো অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং বাজারের চাহিদা উপযোগী। এছাড়া বর্তমানে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা গবেষণার মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরজাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী, দোহাজারী, লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, দিয়াকুল, ধোপাছড়ি, চিড়িংঘাটা, পার্শ্ববতী উপজেলা সাতকানিয়ার কালিয়াইশ, বাজালিয়া, দ্বীপ চরতি, ছদাহা, আমিলাইশ, ধর্মপুর, বাঁশখালীর নাপোড়া, চাম্বল, শীলকুপ, বৈলছড়ি, সাধনপুর, লোহাগাড়ার আধুনগর, বড়হাতিয়া, চুনতি, কলাউজানে প্রচুর শসা উৎপাদিত হয়েছে। এ সকল উপজেলার সবকটি বাজারে চলতি মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ শসা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। রমজানের শুরুতে ৫০-৬০ টাকা বিক্রি করলেও বর্তমানে ৩০-৩৫ টাকায় প্রতি কেজি খিরা বা শসা পাওয়া যাচ্ছে। তবে হাইব্রিড খিরা ও শসা চাহিদা পূরণ করলেও দেশীয় প্রজাতির খিরা ও শসার চাহিদা ক্রেতাদের মাঝে বেশি। দু’সময়ে খিরা ও শসা বপন করা যায়। মধ্য জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত। জানুয়ারি মাসে বপনকৃত শসা-খিরা গ্রীষ্মকালে বাজারে আসে। জুলাই মাসে বপনকৃত শসা-খিরা ও অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বাজারে আসে। এ দু’সময়ে এ ফলনের ব্যাপক চাহিদাও থাকে। একর প্রতি ৫শ থেকে ৬শ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তাড়াতাড়ি বীজ গজানোর জন্য ২৪ ঘন্টা বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর পানি ফেলে দিতে হয় এবং ভিজা কাপড় দিয়ে বীজের আবরণ না ফাটা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হয়। বীজ বপন করার সময় উভয় পাশের কিনারা থেকে ২০ সেন্টিমিটার বাদ দিয়ে ৬০ সেন্টিমিটার দূরে দুটি দাগ কেটে দাগের উপর ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২/৩ সেন্টিমিটার ভিতরে হাত দিয়ে পুঁতে দিতে হবে। সে সাথে অনুমোদিত মাত্রায় সার দিতে হবে। মাটিতে রসের অভাব শসা ও খিরার জন্য মোটেও আশাপ্রদ নয়। আবার শসা ও খিরা জমিতে পানি জমে থাকা মোটেও সহ্য করতে পারেনা। জমিতে রসের অবস্থা বুঝে ১০ থেকে ১২ দিন পর হালকা সেচ দিতে হয়। শসা ও খিরার জমিতে আগাচা হতে দেয়া যাবে না। এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমন কম হবে। চারা গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর ৫০ সেন্টিমিটার পর পর ১টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকীগুলো তুল ফেলতে হবে। গাছের গোড়ায় পানি যেন জমে না থাকে, সেজন্য নালা থেকে মাটি তুলে গোড়ার চারিদেকে বেড কমপক্ষে ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু করতে হবে। গাছের পাতা, ফল ইত্যাদির আকার, রং ভিন্নতর মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে তা স্বমূলে উঠিয়ে ফেলতে হবে। গাছ ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মাছা তৈরি করতে হবে। যেহেতু শসা লতানো শস্য, এজন্য মাটিতে পড়ে গেলে তা খাওয়ার অয়োগ্য বা মানসম্মত হবে না। এতে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এজন্য মাছা একান্ত দরকার। খিরা ও শসার ক্ষেত্রে কিছু পরিচিত বিটল ও মাছির উপদ্রব দেখা দেয়। সাধারণত বিটল, কচিপাতা ও ডগা আক্রমন করে এবং গাছকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। ২ মিলিলিটার এলপিএম বা সুনিথিয়াম ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। স্ত্রী মাছি কচি ফলে ও কান্ডে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ক্ষিরাগুলো ফলের শ্বাস নেয়। এতে ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে। তাই ২ মিলিমিটার সুনিথিয়াম পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হবে। রোগ-জীবাণু গাছের শিখড় নষ্ট করে দেয়। যার ফলে শিখড় দিয়ে রস গাছের কান্ডে পৌছতে পারে না। ফলে রসের অভাবে গাছ মারা যায়। বীজ পরিশোধন, জীবানুমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করে এর সুফল পাওয়া যায়। শসা ও খিরা প্রতিদিন গাছ থেকে তুলা উচিত।
কারণ একটি লতাই থাকলে অন্য খিরা বা শসা ধরা বাধাগ্রস্থ পড়ে। এছাড়া খুব দ্রæত বড় হয়। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত খিরা ও শসাগুলো অবশ্যই বীজ শক্ত হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হবে। অপরিপক্ক অবস্থায় খাওয়া ভাল। এর আকার, ব্যবহারের ধরন ও প্রজাতির উপর নির্ভর করে। শসা ও খিরা যখন সমহারে সবুজ রং ধারন করে তখন এটা সংগ্রহ করা উচিত। শসা ও খিরাকে কোন সময় হলুদ হতে দেয়া যাবে না। উপজেলার পাহাড়ী এলাকা সহ শঙ্খনদীর তীরবর্তী এলাকায় চলতি মৌসুমে প্রচুর খিরা ও শষার চাষ হয়েছে। ফলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম শহরে শসা ও খিরার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।