চন্দনাইশের দক্ষিণ হাশিমপুর সুখেন্দু পাহাড় টিলা কাটছে প্রভাবশালী মহল

59

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবুজে ঘেরা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ী মাটি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করছে প্রভাবশালী মহল। বনবিভাগ কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবহেলা, দায়িত্বহীনতার কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য হারিয়ে যেতে বসলেও দেখার কেউ নেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ হাশিমপুর সুখেন্দু পাহাড়ের টিলা কেটে প্রভাবশালী মহল পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় মাটির যোগান দিচ্ছে দিন-দুপুরে। দেখার যেন কেউ নাই। তাই থেমে নেই অবৈধ পাহাড় কাটা। পাশাপাশি বনবিভাগের পার্শ্ববর্তী জায়গায় গড়ে উঠা ইটভাটাগুলি পার্শ্ববর্তী পাহাড় কেটে ইট তৈরি করছে প্রতিটি মৌসুমে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও সংরক্ষণের অভাবে উপজেলার কাঞ্চননগর, হাশিমপুর ও দোহাজারী এলাকায় নির্বিঘ্নে পাহাড় ও পাহাড়ি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়ি এলাকার দক্ষিণ হাশিপুর সুখেন্দু পাহাড়, লর্ট এলাহাবাদ, লর্ট শ্রীমাই, কাঞ্চননগরসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ের মাটি কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। ভ‚মিদুস্যদের কালো থাবায় বিলীন হচ্ছে চন্দনাইশের পাহাড়ি টিলাগুলো। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সুখেন্দু পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় উঁচু-নিচু পাহাড়ের টিলা কেটে সমতল করা হচ্ছে। এ সকল পাহাড়ের মাটি বিভিন্ন ইটভাটা ও ভিটা ভরাটের যোগান দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বন বিভাগের আওতাধীন একের পর এক পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন রকম প্রতিরোধম‚লক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ফলে বর্তমানে এসব এলাকায় পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময়ে একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেয়া হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ তথা পাহাড়। সে সাথে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা বাগান, আনারস, কাঁঠাল ও লেবু বাগান। এ কারণে চন্দনাইশে নির্মল প্রকৃতির পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অবশিষ্ট থাকা পাহাড়গুলোকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করা না হলে এ অঞ্চলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বছরের পর বছর ধরে পাহাড়, নদী, খাল, সবুজ বনঘেঁষা দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে ৩৭টির অধিক অবৈধ ইটভাটা। আর এসব ইটভাটা গুলোতে মাটি যোগান দিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড় কাটার মাটি। ফসলি জমির টপসয়েল তথা উর্বর অংশ। প্রশাসনের নাকের ডগায় সর্বত্রই সমানতালে পাহাড় কাটা চললেও যেন কারো মাথা ব্যথা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে স্ক্যাভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ট্রাকে বোঝাই করে মাটি সরবরাহ করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, সামান্য টাকার বিনিময়ে না বুঝে অনেকই এ নগদ অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়ে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় এ পাহাড় কাঁটা ও অন্যান্য পরিবেশ ধ্বংসাত্মক মূলক কর্মকান্ডে অতীষ্ট হয়ে সচেতন নাগরিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে এ হেন কর্মকান্ডগুলো ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম বদরুদ্দোজা বলেছেন, তিনি পাহাড় কাটার বিষয়ে শুনে সেখানে গিয়ে কাউকে পান নাই। যেহেতু পাহাড় কাটা হচ্ছে, অবশ্যই তিনি সুখেন্দু পাহাড়ে গিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধের ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনষ্টিটিউট অব ফরেষ্ট এন্ড এনভাইরেনমেন্টের প্রফেসর কামাল হোসেন বলেন, বেশ কয়েকবার পাহাড় ধ্বসে পড়ে অনেক মানুষ মারা গেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। অবশিষ্ট পাহাড়কে রক্ষা করা না গেলে যে কোন সময় বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি ধুয়ে পার্শ্ববর্তী নদী, পুকুর, জলাশয়, জলাভুমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে না পারায় হঠাৎ করে প্লাবিত হচ্ছে এলাকা। এতে করে শষ্যের ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। এভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে এগুলো আরো বাড়তে পারে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।