চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রকৌশলী যখন ঠিকাদার!

132

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. কামাল হোসেন সেলিম। নিজে প্রকৌশলী হয়েও বেনামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে কর্পোরেশনের নিজ বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পের কাজ করেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সত্ত¡াধিকারী হিসেবে স্ত্রীর নাম থাকলেও সবধরনের কর্ম সম্পাদন করেন প্রকৌশলী নিজেই। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর আগে শুরু হওয়া তদন্তের তথ্যপ্রমাণসহ আবারও সম্পূরক প্রতিবেদন চেয়েছে মন্ত্রণালয়। সম্পূরক প্রতিবেদনে সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, উক্ত প্রকৌশলী কোনোধরনের পূর্বানুমতি ছাড়া স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর অধীন পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহের ৫৯ নম্বর ক্রমিকে বলা আছে, ‘কর্পোরেশনের কোনো কাউন্সিলর বা কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিতে স্বত্ত¡ বা অংশ অর্জন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।’ অন্যদিকে আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করে চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন সেলিম কর্পোরেশনের নিজস্ব বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে ঠিকাদারি করেছেন। কামাল হোসেনের স্ত্রী জেবুন্নেছা খানমের মালিকানাধীন মেসার্স এএইচ অ্যান্ড এবি ইঞ্জিনিয়ার্স ২০১৬ সালে ৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় বিবিরহাট গরু বাজারের জন্য পিসি পোল স্থাপনপূর্বক মেটাল হ্যালাইড শেডের মাধ্যমে আলোকায়নের কাজ, ৩৬ নং ওয়ার্ডের বারেক বিল্ডিং হতে নিমতলা পর্যন্ত পোল সরবরাহ, উত্তোলন ও স্থাপন কাজ; ৫ লাখ টাকায় চসিকের আওতাধীন নালা-খাল থেকে এস্কেভেটর দ্বারা মাটি অপসারণসহ বিবিধ করেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৪ জুন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনকভাবেই দুইবছর পর গত ৮ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজালা রাণী চাকমা। পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই কামাল হোসেনের দুর্নীতির সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজিকে একটি দাপ্তরিকপত্র দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (সিটি করপোরেশন-২, শাখা) উপ সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী। এরই প্রেক্ষিতে গত ৮ মে উক্ত প্রকৌশলীর ব্যাপারে তথ্য চেয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহাকে পত্র দিয়েছেন ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজি। পত্রে বলা হয়, কামাল হোসেনের স্ত্রী জেবুন্নেসা খানমের মালিকানাধীন মেসার্স এএইচ অ্যান্ড এবি ইঞ্জিনিয়ার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি চসিকের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ১৭ (৩) ধারা মোতাবেক ‘কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেখে তার পরিবারের কোনো সদস্যকে তার এখতিয়ারাধীন এলাকায় কোনো ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অনুমতি দিতে পারিবেন না।’ এ অবস্থায় অভিযুক্ত প্রকৌশলী সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে কোনো পুর্বানুমতি নিয়েছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। গত ১৪ আগস্ট পত্রের জবাবে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন সেলিমের স্ত্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় কোনো সরকারি অনুমতিপত্র যুক্ত করেননি। এমনকি লাইসেন্স গ্রহণ করার সময় তার স্বামী যে সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাও উল্লেখ করেননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা পূর্বদেশকে বলেন, তদন্ত চলাকালীন এ বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এতে আমরা জানিয়েছি কামাল হোসেনের স্ত্রীর নামে একটি প্রতিষ্ঠান চসিকে ঠিকাদারির কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে কোনো অনুুমতি নেওয়া হয়নি। এরপর গত ৮ মে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ ঘটনার সম্পূরক প্রতিবেদনে জন্য জানতে চাওয়া হয়, কামাল হোসেনের স্ত্রী ঠিকাদারি করার সময় কোনো পূবানুমতি নিয়েছেন কি না? আমরা যাচাই করে জানিয়েছি, উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো পূর্বানুমতি নেয়নি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্বামী যে কর্পোরেশনে কর্মরত তাও উল্লেখ করা হয়নি।