চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ‘ভালো’ হবে

60

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুুরুল হুদা ভোট গ্রহণের তিনদিন আগেই বলে দিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ‘ভালো’ হবে। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের তিনি কথা বলেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ‘আশ্বস্ত’ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। সভা শেষে তিনি বলেন, বিজিবি, আনসার, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার ১৬ জনের বক্তব্য আমরা শুনেছি। নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে তারা সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকে আশাবাদী ২৭ জানুয়ারির চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, বিভিন্ন পর্যায়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে নিয়োগ-মোতায়েন, সেটা সঠিকভাবে হয়েছে। আশা করি, নির্বাচন ভালো হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার রশিদুল হাসানসহ র‌্যাব, আনসার, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটি বলছে, ইসি সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ হয়ে কাজ করছে। চলমান পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা ঘটনা আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ে নতুন সমালোচনায় পড়েছে ইসি। তার মধ্যেই অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রচারে সংঘাতে প্রাণক্ষয়ের পর ভোটে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। তা নাকচ করে নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই, তার প্রয়োজনীয়তাও কমিশন অনুভব করছে না।যেখানে ইভিএমে ভোট হবে, সেখানে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা থাকবে। ভেতরে একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়া সম্ভব না।
বিএনপির প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং সমর্থকদের বাসায় গিয়ে পুলিশের হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিষ্প্রয়োজনে হয়রানি করছে, এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে এবং আদালতের ওয়ারেন্ট আছে, অবশ্যই পুলিশতাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করতে পারে। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযান নেই।
তিনি জানান, শনিবার পর্যন্ত জমা পড়া ৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ৩৫টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকিগুলো তদন্তাধীন। বিভিন্ন মামলার অনেক আসামি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন, এ ক্ষেত্রে আইনের কারণেই কিছু করার নেই। কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না, সেটার একটা আইন আছে। কারা প্রার্থী হতে পারেন, সেটারও কতগুলো বিধান আছে। যদি কেউ দুই বছরের শাস্তি পান, তাহলে তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হয়। যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সে অপরাধী না।
ভোটের তারিখ সপ্তাহের মাঝামাঝি রাখার কারণ দেখিয়ে নূরুল হুদা বলেন,নির্বাচন বৃহস্পতিবার বা রবিবার করলে সেখানে আমাদের আশা থাকে ভোটাররা ভোট দেবে। কিন্তু দেখা যায় ছুটি পেয়ে তারা সবাই বাড়ি চলে যায়। ভোট দেয় না। সে কারণে আমরা মাঝখানে রাখি।
সাধারণ ছুটি না রাখার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, কেবিনেট থেকে একটা নির্দেশনা জারি আছে। যারা ব্যক্তিগত বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন, তাদের যেন ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এ কারণে সাধারণ ছুটি রাখি না।
ভোটের দিন বন্দর নগরীতে ট্রাক এবং মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ থাকবে জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় বহিরাগত লোকজন এসে তা ব্যবহার করে। তবে বড় বড় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম চালু থাকবে।
নির্বাচনের চেয়ে জীবন অনেক মূল্যবান বলে মন্তব্য করে নুরুল হুদা বলেন, প্রতিযোগিতায় নির্বাচন শুরু হবে কিন্তু সহিংসতায় শেষ হবে না। সংঘাত সংঘর্ষে জীবন চলে যাবে, এটা হতে পারে না। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবেন কিন্তু সেটা সহনশীল পর্যায়ে। এ নির্বাচন উপলক্ষে কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তির জীবন চলে গেছে। এভাবে সংঘাত সংঘর্ষে জীবন চলে যাবে এটা হতে পারে না। নির্বাচন উৎসবমুখর হওয়ায় মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের ধন্যবাদ জানান সিইসি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনাদের কাছে একজন প্রার্থীর পরিচয়, তিনি প্রার্থী। তিনি কোন্ দলের, মতের বা গোত্রের, সেটা পরিচয় নয়। প্রত্যেককে তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় আইনি সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের।