চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী যৌন নিপীড়নকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

3

রতন কুমার তুরী

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে আবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র নামক অসভ্যরা প্রকাশ্যে যৌননিপীড়ন করবে এবং তা আবার ভিডিওতে ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম হোসেন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নুরুল আবছার বাবুসহ পাঁচজন মিলে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেই যৌননিপীড়ন করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মত নিন্দনীয় এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে পুরো দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উক্ত যৌননিপীড়নের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকায় এসব কুলাঙ্গারদের মধ্যে থেকে ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আজিম হোসেন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে। মাসুদ এবং শাওন নামের আরো দুইজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করলেও তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। বাকি একজনকেও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। এখন প্রশ্ন হলো কেনো এসব কোমলমতি ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি জায়গায় এমন জঘন্য অপরাধ করার সাহস পেলো ? এদের পেছনে কারাইবা ইন্ধন দিচ্ছে ?
শোনা যায় গ্রেফতাকৃতরা সকলেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-এর সমর্থক বলে খবর প্রকাশিত হলেও তারা আদৌ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-এর সমর্থক কীনা তা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে এবং ছাত্রলীগের সমর্থক হলেও তারা যাতে কোনো ছাড় না পায় তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। এখন সকলের প্রশ্ন ছাত্রলীগকে সমর্থন করে বলেই কী তারা ক্যাম্পাসে এমন বর্বর ঘটনা ঘটানোর সাহস পেলো? গ্রেফতারকৃতরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় এতক্ষণ পর্যন্ত একজন ছাত্রীকে তার বন্ধুর সামনে যৌননিপীড়ন করে গেলো, তখন ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ নেতারা কোথায় ছিল ? কেনোইবা তারা এই ঘটনাটি রুখে দিতে পারলোনা ? প্রশ্ন থেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এলাকায় কেনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা এতো ঢিলেঢালা ? তা নাহলে এতোক্ষণ সময় পর্যন্ত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তার পরিচিত ক্যাম্পাসেই যৌননিপীড়নের শিকার হলো কেউ এগিয়ে এলোনা এটা কীভাবে মেনে নেবে দেশের সাধারণ মানুষ ?
একজন অভিভাবক তার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কীভাবে নিরাপদ ভাববে? প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রকৃতপক্ষে একজন শিক্ষার্থী তার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে শতভাগ নিরাপদ ভেবেই দিনরাত যেকোনো সময় যেকোনো কিছুর জন্য তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে পারে কিংবা কথা বলতে পারে সেখানে অন্যকারো নাক গলানোর অধিকার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা এমন যে, এখানে জীবনের অনেক কিছু শেখা যায় এবং ভবিষ্যতে জীবন গঠনের জন্য এখানে রয়েছে জ্ঞান আহরণের অবারিত সুযোগসুবিধা। ফলে এখানে একজন ছাত্রী কিংবা ছাত্র তার ব্যক্তিগত জীবন কেমন কাটাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা তার বন্ধুর সামনে তাকে যৌননিপীড়ন করা এটা কোনো সভ্য মানুষের কাজ নয়। এমন কাজ যেসমস্ত ছাত্ররা করেছে তারা পুরোবিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কালিমা লেপন করেছে।
সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এবিষয়ে হার্ট লাইনে গিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। অপরাধী যে দলেরই হোকনা কেনো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরও উচিত এসব চিহ্নিত অপরাধীদের কঠোর শাস্তি আওতায় আনার জন্য জোড় দাবি তোলা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এ যৌননিপীড়নের বিরুদ্ধে একসাথেই প্রতিবাদ করে গ্রেফতাকৃতদের কঠিন শাস্তির আওয়াজ তোলতে হবে সাথেসাথে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও উচিত হবে শুধু আজীবন বহিষ্কার নয় গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের প্রকাশ্যে যৌননিপীড়নের শাস্তি যাতে কঠিন থেকে কঠিনতর হয় সে ব্যবস্থা করা, তাহলেই কেবল ভবিষ্যতে কোনো ছাত্র, ছাত্রীদের যৌননিপীড়ন করার সাহস পাবেনা।
আমরা প্রত্যাশা করবো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌননিপীড়নের জঘন্য ঘটনার হোতারা সকলকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে সক্ষম হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক