চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুললে বড় সংঘাতের শঙ্কা

14

চবি প্রতিনিধি

আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আবাসিক হলের সিট দখলসহ নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বন্ধ ক্যাম্পাসে একের পর এক সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই তিন দফা সংঘর্ষে জড়িয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এর আগেও কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়িয়েছিল সংগঠনটি। বন্ধ ক্যাম্পাসেও একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। ক্যাম্পাস খুললে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। প্রায় দেড় বছর আগের মারামারির প্রতিশোধ নিতে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দুই পক্ষ সিক্সটি নাইন ও সিএফসির মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় সিএফসি গ্রুপের কর্মী ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান, সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী ও মেরিন সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আলী রিমন এবং গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন ও বাঁধন।
এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় এএফ রহমান হলের একটি রুম দখলকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী হলে ভিএক্স ও একাকার গ্রæপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় একাকার গ্রুপের কর্মী মো. সাব্বির ও মো. সীমান্ত।
সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর আবার সংঘর্ষে জড়ায় বিজয় গ্রুপের দুটি পক্ষ। অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এ সংঘর্ষে আহত হয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মো. জাহিদ, সংস্কৃত বিভাগের মো. মুজাহিদ, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির আহমেদ ও আরবি বিভাগের সাহিল কবির। মারামারির পর শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদকে বিজয় গ্রুপ বের করে দেয় একই গ্রæপের জুনিয়র কর্মীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কথা-কাটাকাটি কিংবা ঠুনকো বিষয়েও মাঝেমধ্যে বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে চবি ছাত্রলীগ। এসব ঘটনায় প্রশাসন কিংবা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে দৃশ্যমান তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস খুললেও বড় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, উপ-গ্রুপগুলো যদি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় সেটার দায়িত্ব ছাত্রলীগ নিবে না। সংঘর্ষে জড়ানো কেউ যদি ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল জায়গার হয়ে থাকে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এর বাইরে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদেরকে সাংগঠনিকভাবে যে শাস্তি দেওয়া যায়, আমরা সেটার ব্যবস্থা করবো। আর এটার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভ‚ঁইয়া বলেন, আমরা সবসময় এ ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে কাজ করে থাকি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমসময়ই সজাগ থাকে। তারপরও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলোর বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু গত কয়েকদিনে সংঘটিত হওয়া কয়েকটি ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না, এটা তো নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে না হওয়ার জন্য যে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া দরকার, তা আমরা নিয়ে থাকি। পূর্বের ঘটনায় কেউ অভিযোগ না দিলেও আমরা একটা তদন্ত কমিটি করবো। তদন্ত করে কারা কারা জড়িত সেটা নিশ্চিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।