চট্টগ্রাম গণহত্যার রায় ঐতিহাসিক বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

136

জেনারেল এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত জনসভা শুরুর আগে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল ২৪ জন নিরীহ মানুষকে। ঘটনার চার বছর পর ২৯৯২ সালে দায়েরকৃত মামলাটির অবশেষে রায় ঘোষণা করা হল গত সোমবার। এ রায় পেতে চট্টগ্রামবাসীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩২ বছর। রায়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। দন্ডিতরা সবাই পুলিশের সদস্য। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন চার আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। বিলম্ব হলেও এ রায় এককথায় ঐতিহাসিক। কারণ ১৯৮৮ সালে যে হত্যাকান্ডটি সংগঠিত করা হয়েছিল,তা সাধারণ কোন মানুষকে টার্গেট করে করা হয়নি, হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তৎকালীন অন্যতম প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে । যদিও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় শেখ হাসিনা হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিলে, কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ২৪জন সাধারণ মানুষ হত্যার স্বীকার হন। রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে এ হত্যাকান্ডের বর্বর ঘটনায় চট্টগ্রামবাসী সেদিন শোকে বিহবল হয়ে উঠেছিল। লজ্জায় মাথানত হয়েছিল চট্টগ্রামবাসী। বুকবেঁধে কষ্ট সহ্য করে দীর্ঘ তিন দশক অপেক্ষার পর অবশেষে আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে চট্টগ্রামবাসীর কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোছন হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এবার রায় বাস্তবায়নের পালা। আমরা মনে করি, সকল আইনগত প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে শেষ করে পুলিম প্রশাসন এ রায় বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সাথে সচেষ্ট হবেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৮ সালে সংঘটিত এ হত্যাকান্ড ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ নামেই অধিক পরিচিত। ওইদিন সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহর লক্ষ্য করে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ২৪ জন নিহত এবং আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। আদালতে রায় ঘোষণাকালে বিচারক এ ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকান্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনার চার বছর পর ১৯৯২ সালে আইনজীবী শহীদুল হুদা আদালতে চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৪৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামির মধ্যে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ তিনজন এরই মধ্যে মারা গেছেন। দৈনিক পূর্বদেশসহ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর উদ্ধেৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও মামলার রায়ে সন্তুষ্ট। এতদিনের পরিশ্রমের ফসল এটি। আজ রায় ঘোষণার পর ভালো লাগছে, কারণ এই রায়ের সঙ্গে ৩২ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা নিহত ২৪ জনের পরিবারের আবেগ জড়িত রয়েছে।’ তার ভাষায়, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় হওয়া মামলায় আদালত পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আরেক রায়ে প্রত্যেকের আরও ১০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়।
মামলার অন্যতম সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী, রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় জানা যায়, ‘ঘটনার দিন সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে আসার সাথে সাথে ওয়্যারলেস সেটে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে পুলিশ তাকে বহনকারী ট্রাক লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। খুনিদের লক্ষ্য ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ রায়ের মাধ্যমে আমরা কলঙ্কমুক্ত হলাম, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।’