চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লবণপানিতে পিচ্ছিল

95

থেকে থেমে ঝরছে বৃষ্টি। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকেই তা ঝরছে। শীত শেষে গরম শুরুর কয়েক দিন পর ‘ফাল্গুনী বৃষ্টি’ শুরু হয়। এ যেন বৃষ্টি নয়, গুঁড়ি গুঁড়ি তুষার কণা। সাথে বেড়েছে শীত। গুঁড়ি বৃষ্টিতে সড়ক-মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কমেছে গতিও।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একইভাবে বৃষ্টিতে মহাসড়ক আর শীতে সাধারণ মানুষের মাঝে দুর্ভোগ বাড়ে।
গতকাল সারাদিন চট্টগ্রামে সূর্যের দেখা মেলেনি। পুরোদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। এ কারণে অধিকাংশ যানবাহন হেড লাইট ও সিগন্যাল লাইট জ্বালিয়ে এবং গতি কমিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। এ কারণে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে সড়কে নিয়োজিত ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যরাও।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সড়কগুলোতে জমে থাকা ময়লার আস্তরণ গুঁড়ি বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ময়লার আস্তরণের সাথে লবণবাহী ট্রাক থেকে লবণপানি পড়ে সড়কের উপর পিচ্ছিল আবরণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অনেক যানবাহনের ব্রেক অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ব্রেক কষতেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা থেকে পটিয়া, নগরীর মাঝিরঘাট ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রাকযোগে লবণ পরিবহন করা হয়।
পণ্য পরিবহনের কিছু নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ট্রাক থেকে যাতে পানি সড়কে না পড়ে সেজন্য নিচে ত্রিপল দিতে হয়। কিন্তু লবণ ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। তারা লবণ পরিবহনে টেকসই ত্রিপল ব্যবহার করছেন না। ফলে লবণ পানি পড়ছে মহাসড়কে। লবণ পানির সাথে ধূলা-বালি মিশে মোটা আস্তারণ তৈরি হয়েছে।
যাত্রীরা জানান, প্রতি বছর শুকনো মওসুম শুরুর পর লবণপানিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক। কোন সুরক্ষা ছাড়াই উপকূলীয় এলাকা থেকে ট্রাকে মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে লবণ। এ সময় ট্রাক থেকে লবণপানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে বেশির ভাগ লবণ আসে পটিয়ার ইন্দ্রপুলের লবণ মিলগুলোতে। কিছু লবণ যায় বোয়ালখালী ও নগরীর মাঝিরঘাটের কয়েকটি কারখানায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর লবণ উত্তোলনের মওসুমে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের সব সংস্থাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে লবণ পানির আস্তরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। বৃষ্টি ছাড়াই শুকনো মওসুমে লবণ পরিবহনের কারণে বিকাল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত এই মহাসড়ক থাকে পিচ্ছিল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
গত এক মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবচে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে পটিয়ায়। তাতে হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি। গতকাল হালকা বৃষ্টিতে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়।
কলেজ বাজার হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক ও ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, পুরোদিন রাস্তায় গাড়ি কম ছিল। এ কারণে যাত্রীরা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছে। সড়কের উপর আস্তরণ হালকা বৃষ্টিতে কাদা মাটিতে পরিণত হয়। এ কারণে যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এতে দুর্ঘটনার হার বাড়লেও বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, বৃষ্টি আরেকটু বেশি হলে সড়কের উপর জমে থাকা আস্তরণ ধুয়ে যেত। এতে সড়ক ঝুঁকিমুক্ত হত। তবে বিকাল পর্যন্ত তা না হওয়ায় মহাসড়কে ঝুঁকি তৈরি হয়। লবণ পানি মহাসড়কে পড়া বন্ধ করা গেলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যেত। খোলা লবণ পরিবহন বন্ধে ট্রাফিক আইনে কোন ধারা নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বদেশকে জানান, হঠাৎ বৃষ্টিতে নেমে আসা ঠান্ডায় সাধারণ মানুষের মাঝে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। ঠান্ডায় শিশু ও বয়স্করা বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বেড়েছে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মত রোগ-বলাই। এতে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে বেশি। চট্টগ্রামের প্রতিটি হাসপাতালে এখন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।