চট্টগ্রাম এলএ অফিস দৃষ্টান্ত হোক

92

ভূমি অফিস মানেই ‘দুর্নীতির আখড়া’ এমনটি বিশ্বাস একদিনে জন্মেনি, বরং ভূমিসংশ্লিষ্ট অফিসে যারা গিয়েছেন একবারের জন্য হলেও তারা তা বুঝতে তেমন কষ্ট হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দেশের প্রায় সকল সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে এমনটি চিত্র নিত্য বিষয়। ভূমি অফিসে যেটি হয় যেমন- সাধারণ নামজারি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উঠানো- এগুলোর কোনোকিছুই ঘুষ ছাড়া হয় না।
এছাড়া সরকারের ভূমি অধিগ্রহণের পর তার ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে মানুষের পড়তে হয় সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায়। ক্ষতিপূরণের টাকা আদৌ পাবে কিনা, পেলেও কত জায়গায় ধর্না দিতে হবে, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের শিকার হতে হবে, তার ইয়ত্তা নেই। তারপরও সময়মতো ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগের অন্ত থাকে না সরকারি ভূমি অধিগ্রহণ বা ল্যান্ড অ্যাকুইজিশনের শিকার হওয়া মানুষদের। আশার কথা, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ অফিসকে (এলএ) ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হচ্ছে।
জানা যায়, নগদ সাড়ে সাত লাখ টাকা ও কোটি টাকার কমিশনের চেকসহ চট্টগ্রাম এলএ অফিসের এক চেইনম্যান ও জেলা প্রশাসনের এক কর্মচারী স¤প্রতি দুদকের হাতে ধরা পড়ার পর এলএ অফিসের অনিয়ম আবারও সামনে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এলএ অফিসকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা তথা অনলাইনে ক্ষতিপূরণের আবেদন ও জমির কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে কখন শুনানি হবে- ইত্যাদি জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতেকরে অধিগ্রহণ হওয়া জমির মালিককে সমস্যা থাকলে একবার শুনানিতে যাওয়া ও একবার চেক আনতে যেতে হবে। সমস্যা না থাকলে কেবল চেক আনার দিন যেতে হবে। এমনকি আবেদন গ্রহণের পর কবে শুনানি ও কবে চেক বিতরণ তা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। কারণ এর মাধ্যমে জমির মালিককে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ধর্না দেয়া ও ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হওয়া লাগবে না বলে আশা করা যায়।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পর চট্টগ্রাম এলএ অফিসের এ দৃষ্টান্ত দেশের সব এলএ অফিস অনুসরণ করে মানুষের সমস্যা দ্রæত সমাধান ও হয়রানি লাঘবের উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বস্তুত ভূমিসংক্রান্ত সব অফিস, এমনকি সরকারি সব অফিসকেই ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সবকিছু সহজ করা এবং মানুষকে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার বিকল্প নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প নিয়েই বর্তমান সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেছে, এখনও আছে, এই নিয়ে কাজ করছে। তবে কাক্সিক্ষত পর্যায়ের ডিজিটালাইজেশন এখনও হয়নি। সরকার ই-টেন্ডার ও সব সরকারি সেবা ঘরে বসে পাওয়ার পথ তৈরি করেছে; কিন্তু সেটা এখনও ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা মনে করি, ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে কোথায় কী সমস্যা, তা চিহ্নিত করে সবকিছু অনলাইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকটাই কমিয়ে আনা ও মানুষের হয়রানি কমানো সম্ভব।
বর্তমান যুগ অনলাইনের যুগ। পৃথিবীর যেকোনো স্থানে বসে যেকোনো দেশের প্রয়োজনীয় সেবা ও দরকারি তথ্য সম্পর্কে জানা যায়। এ অবস্থায় সরকারি তথ্য পাওয়া ও নিজের জমির ক্ষতিপূরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তথ্য ঘরে বসে না পাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনকই বটে। চট্টগ্রাম এলএ অফিস এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে ও পথ দেখাচ্ছে। এখন অন্যদের পালা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়ার। ভূমিমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর সবকিজু ডিজিটাল করা ও সংশ্লিষ্ট সবার অর্থের হিসাব নেয়ার কথা বলেছেন। বিস্তৃত ডিজিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে সে পথে অগ্রসর হতে হবে। চট্টগ্রাম এলএ অফিস হোক এর প্রথম উদাহরণ। এ জন্য আমরা অবশ্যই চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে ধন্যবাদ জানাই।