চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি কমিটি ‘হচ্ছে, হবে’ করে কেটে গেল দুই বছর

133

‘হচ্ছে, হবে’ করে সময় গেলেও দুই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি। একেক সময় একেক নেতাকে আহব্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হচ্ছে বলে প্রচার হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবুও আহব্বায়ক-সদস্য সচিববিহীন কমিটির অন্য সদস্যরা অপেক্ষায় আছেন নতুন কমিটি ঘোষণার। অন্যদিকে কমিটি না থাকায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন।
এদিকে মোসাদ কানেকশনের অভিযোগে কারাগারে থাকা আসলাম চৌধুরীর গ্রিন সিগনাল না পাওয়ায় উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি আটকে আছে বলে প্রচার রয়েছে। এমনকি আসলাম চৌধুরীকে আহব্বায়ক করার কথাও শুনা যাচ্ছে। তবে মামলায় জড়িয়ে পড়া আসলাম চৌধুরীর সহসা মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে উত্তরের সাত উপজেলা। কমিটি না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দিন দিন দূরত্বও বাড়ছে।
এ বিষয়ে কথা হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, উত্তর জেলার কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন। যেকোনো মুহূর্তে ঘোষণা আসতে পারে। আহব্বায়ক-সচিব কারা হচ্ছেন সেটা কেন্দ্রের বিষয়। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে দ্রুত কমিটি হচ্ছে এটা নিশ্চিত।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল আসলাম চৌধুরীকে আহব্বায়ক এবং কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে সদস্য সচিব করে উত্তর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে এ কমিটির আকার বাড়িয়ে ৯৩ সদস্যের করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে জেলার প্রতিটি থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়। আর এ কমিটি করতে গিয়েই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন আহব্বায়ক ও সদস্য সচিব। সেই দ্ব›েদ্বর কারণে থানা পর্যায়ে আহব্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুগত দুটি করে কমিটি হয়। এরই মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আহব্বায়ক আসলাম চৌধুরী। গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে আছেন তিনি।
অন্যদিকে ২১০৮ সালের জানুয়ারিতে মারা যান সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান। আহব্বায়ক ও সদস্য সচিবের পরে এ কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক বা যুগ্মসচিবের কোনো পদ ছিলো না, বাকি সবাই ছিলেন সদস্য। ফলে নেতৃত্বের ভার কারো উপর পড়েনি। এ অবস্থায় কখনো দুই গ্রূপ আবার কখনো তিন গ্রূপে বিভক্ত হয়ে দায়সারাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন কিছু নেতা। বিভক্ত এ সংগঠনিক এলাকার নেতা-কর্মীরা অনেক সময় মুখোমুখি অবস্থান নেন। দ্বন্দ্বে জড়ানোর কারণে অনেকে ইতিমধ্যে নিষ্ক্রিয়তার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। বিষয়টি কেন্দ্র জানতে পেরে দক্ষিণ জেলা কমিটি গঠনের আগেই উত্তর জেলার কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে দক্ষিণ জেলার আহব্বায়ক কমিটি হয়ে গেলেও দেখা মিলেনি উত্তর জেলার।
এ বিষয়ে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) জালাল আহমেদ মজুমদার বলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের কাজ চলছে। সেখানে (উত্তর জেলা বিএনপিতে) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেউ নেই। যার কারণে সাংগঠনিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। আহব্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ চলছে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। সারা দেশে এভাবে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
উত্তর জেলার কমিটিতে স্থান পেতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে এম এ হালিম, কর্নেল আজিমুল্লাহ বাহার, ভিপি নাজিম, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন ও ডাক্তার খুরশিদ জামিল চৌধুরীর নাম আলোচনায় আসছে। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র কাকে আহব্বায়ক করে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। বিরোধপূর্ণ এ সাংগঠনিক এলাকায় উপযুক্ত কাউকে দায়িত্ব দেয়া না হলে তৃণমূলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
আহব্বায়ক কমিটির সদস্য এম এ হালিম বলেন, আসলাম ভাই জেলে যাওয়ার পর থেকেই উত্তর জেলার অবস্থা ভালো না। আমরা কয়েকজন মিলে সংগঠনটাকে ধরে রেখেছি। কিন্তু সংগঠনের একটা কাটামো দরকার। এখন দলের দুঃসময়। দুঃসময়ে অধিকতর সুসংগঠিত কাটামোতে থাকা প্রয়োজন। কেন্দ্র বিষয়টি নিশ্চয় বিবেচনা করবে।
আহব্বায়ক কমিটির আরেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, সাংগঠনিক কাঠামো না থাকাতে উত্তর জেলা ঝিমিয়ে আছে। দলের দুঃসময়ে নেতৃত্বহীন হয়ে থাকার কারণে তৃণমূলে এর প্রভাব পড়ছে। এখন আন্দোলন-সংগ্রামের সময়। এই সময়ে একটি সাংগঠনিক এলাকা নেতৃত্বহীন রাখা যায় না। উত্তর জেলার শক্তিকে কাজে লাগাতে দ্রূত একটি কমিটি প্রয়োজন।
আহব্বায়ক কমিটির সদস্য ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন বলেন, কমিটি না থাকার কারণে আন্দোলনে লোকজনের আসা কমে যাচ্ছে। কার্যক্রম সঠিকভাবে পালন হচ্ছে না। সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য কমিটি দরকার। কমিটি কেন হচ্ছে না সেটাই বুঝতেছি না। কমিটি হবে না কেন? সীতাকুন্ড-মিরসরাই এটা ঢাকা-চট্টগ্রামের লাইফলাইন। এখানে যদি কমিটি গঠন না হয় তাহলে কিভাবে লিডারশিপ হবে?
বর্তমানে উত্তর জেলা বিএনপির কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন হাতেগোনা কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে দু’চারজন নিয়মিত হলেও বাকিরা কর্মসূচিতে অনিয়মিত। নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টায় থাকা উত্তর জেলার নেতাদের মধ্যে আছেন, আহব্বায়ক কমিটির সদস্য এম এ হালিম, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন, সাবেক ড্যাব সভাপতি ডাক্তার খুরশিদ জামিল চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ, সাবেক চাকসু ভিপি এসএম ফজলুল হক ও নুরুল আমিন ও রাঙ্গুনিয়া বিএনপির আহব্বায়ক লায়ন মো. শওকত আলী নূরসহ কয়েকজন। হাতেগোনা এই কয়েকজন নেতার হাতে উত্তরের নেতৃত্ব থাকলেও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থানে থাকছেন, অন্য নেতার নির্দেশনার কোনো পরোয়া নেই তাদের মধ্যে। এ অবস্থায় কিছু কর্মসূচি পালন করলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে একেবারেই নিষ্ক্রিয় উত্তর জেলা বিএনপি। আর এ নিষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে নেতা-কর্মী থেকে সমর্থকদের মধ্যেও।