চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বিক্রি ৪ ধরনের ওষুধ

96

চট্টগ্রামে ওষুধের ফার্মেসিগুলোতে চার ধরনের ওষুধের বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। ফার্মেসিগুলোতে প্রতিদিন বিক্রি হওয়া ওষুধের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং গ্যাস্ট্রিক এই চার ধরনের ওষুধের বিক্রি ৮০ শতাংশ। এখন যে কোনো পরিবারের কম বয়েসি থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত যে কাউকে কোনো না কোনোভাবে নিয়মিত এসব ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন পড়ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ঠিকমত খাবার না খাওয়া, যা খায় তা সঠিক নয়, খাবারে লবণের আধিক্য, অতিমাত্রায় লাল মাংস ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, জাঙ্কফুড বেশি খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া, খাবারে নানা রকম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে এসব রোগের হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফার্মেসিগুলোতে এসব রোগে ব্যবহৃত ওষুধগুলোর বিক্রি বেড়ে চলছে।
সরেজমিনে নগরীর জামালখান, হাজারী লেন, চকবাজার, বহদ্দারহাট, প্রবর্তক মোড়, মেহেদীবাগ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফার্মেসিতে প্রতিদিন যেসব ওষুধ বিক্রি হয় তার মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বিক্রি ৮০ শতাংশ। আর চার ধরনের ওষুধের মধ্যে হৃদরোগের ওষুধের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। তবে ডায়াবেটিস রোগের ওষুধের বিক্রিও বেড়েছে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ যেন নিত্যসঙ্গী।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, দেশের অন্য জেলার চেয়ে চট্টগ্রামে হৃদরোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই হিসেবে এই ওষুধের বিক্রি স্বভাবত চট্টগ্রামে বেশি হবে। আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ তো অন্য জেলা থেকে নিয়ে এসে চট্টগ্রামে বিক্রি করতে হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. প্রবীর কুমার বলেন, এখানে ১০০ বেডের বিপরীতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন হার্টের রোগী ভর্তি থাকেন। যা আসনের চেয়ে সাড়ে তিনগুণ। এছাড়া প্রতিদিন এই হাসপাতালের আউটডোরে ২৫০ থেকে ৩০০ জন হার্টের রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
হাজারী গলি ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির সহ সভাপতি শফিউল আজম বলেন, প্রতিদিন ফার্মেসিতে যে পরিমাণ ওষুধ বিক্রি হয়, তৎমধ্যে এই চার ধরনের ওষুধের বিক্রি ৮০ শতাংশ বেশি। আর এইসব ওষুধগুলো চট্টগ্রামেই বেশি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রাম হলো মেজবানের শহর, দাওয়াতের শহর। গরুর মাংস, চর্বি জাতীয় খাবার, তেল ও ঝাল বেশি খাওয়ার কারণে হচ্ছে। যেমন শরীরের জন্য চিনি ক্ষতিকর, তেমনি তেল শরীরের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর। আর এক চামচ তেল শরীরে গিয়ে তিন চামচ চিনির পরিমাণ ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা চিনি না খেলেও তেল কিন্তু ঠিকই খায়। তারা বুঝতে পারে না যে তেল তিনগুণ বেশি শরীরে ক্ষতি হয়। সেই সাথে কালো ভুনা, নলা ও ঝোল রোগ বাড়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র অঞ্চলের পাশে হওয়ায় পানির মধ্যে লবণাক্ততা ও খনিজ লবণের কারণও রয়েছে।
এসব ওষুধের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পেছনে হার্ট বিশেষজ্ঞ ও হার্ট সার্জন ডা. সরোয়ার কামাল বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা ঠিকমত খাবার খাই না, যা খাই তা সঠিক নয়, বেশি পরিমাণে জাঙ্কফুট খাই, খাবারে নানা রকম প্রিজারভেটিভের ব্যবহার, ক্যান জাতীয় খাবার যাতে লবণ থাকে বেশি, কায়িক পরিশ্রম ও হাঁটা-চলা কমে যাওয়া, অনলাইনে খাবার অর্ডার, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাই না। এসব কারণে আমাদের হার্টের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বেড়ে চলছে হাইপার টেনশন। এছাড়া রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হাইপার টেনশন হতে পারে। আর গরুর মাংস, চর্বিযুক্ত খাবারের কারণে রক্তনালীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এসব রোগগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ব হার্ট দিবস আজ :
বিশ্ব হার্ট দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হবে। হৃদরোগ এখন সারা বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি। অন্যান্য রোগের তুলনায় হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি হৃদরোগে। এবারের প্রতিপাদ্য হলো মাই হার্ট, ইওর হার্ট (আমার হৃদয়, তোমার হৃৎপিন্ড) গতবছরও একই থিম ছিল। এবার সুনির্দিষ্টভাবে ৫টি অঙ্গীকার করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো পরিবারের জন্য অঙ্গীকার, রান্না ও খাদ্য যেন হয় আরো স্বাস্থ্যসম্মত। সন্তানের জন্য অঙ্গীকার, শরীরচর্চার জন্যে তাগাদা এবং ধূমপান বর্জনের আহব্বান। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অঙ্গীকার, স্বাস্থ্যকর্মীরা যেন কারো কোলেস্টেরল বাড়তে না দেন এবং সবসময় ধূমপান ত্যাগ করার কথা বলেন। নীতিনির্ধারকদের জন্য অঙ্গীকার, সুস্থ হার্টের পক্ষে তারা দেশের নীতি নির্ধারণ করবেন। চাকরিদাতার জন্য অঙ্গীকার, কর্মস্থল তারা এমনভাবে তৈরি করবেন যেখানে হার্টবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করবে।
এদিকে আজ রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হার্ট সেন্টারসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিক নানা ধরনের অনুষ্ঠান ও সেমিনারের আয়োজন করেছে।