চট্টগ্রামে সতর্কাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

34

মাদ্রাসা, মঠ-মন্দিরে পুলিশ মোতায়েন। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, টহল জোরদার, বসেছে চেকপোস্ট
রতন কান্তি দেবাশীষ
ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ঘিরে ভোলায় সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে নগরী ও জেলার প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মঠ মন্দিরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জানা যায়, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে ঘিরে রবিবার ভোলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেখানে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত হয় চার জন। আহত হয় শতাধিক। পুলিশ ফেসবুক হ্যাকের সঙ্গে জড়িত দু’যুবককে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনার জেরে রবিবার বিকালে হাটহাজারীতে সড়ক অবরোধ ও থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবারও তা অব্যাহত থাকে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সকল রেঞ্জ, মহানগর ও জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়। রবিবারই চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, সিএমপি কমিশনার ও জেলা পুলিশকে নির্দেশনা পাঠানো হয়। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনকে সতর্ক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে মহানগরে পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। সিএমপি সদর দপ্তর থেকে ১৬টি থানাকে যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাতে কেউ ঘটাতে না পারে সে জন্য সকল পদক্ষেপ নিতে ওসিদের নির্দেশনা দেয়া হয় রবিবারই। রবিবার রাত থেকে প্রতিটি থানা এলাকায় অতিরিক্ত চেক পোস্ট বসানো হয়। সেসব চেক পোস্টে সন্দেহভাজন যানবাহন ও পথচারিদের তল্লাশি চালানো হয়। নগরীতে অন্তত ৪০টি স্পটে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান এক পুলিশ কর্মকর্তা।
গোসাইলডাঙ্গা মন্দিরসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত মঠ-মন্দিরগুলোর সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশী টহলও বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিমও মাঠে রয়েছে।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। কেউ সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগর জুড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ওসিদের সব বলে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে দেয়া হবে না। পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের টিম মাঠে রয়েছে। সর্বত্র নজরদারিও রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পুলিশ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, পটিয়া, সীতাকুÐ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জেলার প্রতিটি থানার ওসিকে কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, চারিয়া মাদ্রাসা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি থানার স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকার মাদ্রাসা-মঠ-মন্দিরগুলোর সামনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। চেক পোস্ট বসানো হয়েছে প্রতিটি থানা এলাকায়।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সোমবার পূর্বদেশকে বলেন, ভোলার ঘটনার সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি থানার ওসিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকার মাদ্রাসাগুলোকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
অপরদিকে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, ভোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউকে কোন ধরনের সুযোগ নিতে দেয়া হবে না। বিষয়টি অতি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর করা হয়েছে।