চট্টগ্রামে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত ১৫০০ গবাদি পশু

126

চট্টগ্রামে প্রথমবার শনাক্ত হওয়া লাম্পি স্কিন রোগ এখন সারাদেশে ছড়িয়েছে। গত এপ্রিল মাসে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহার একটি খামারে এ রোগ প্রথম শনাক্ত হয়। পরে ধীরে ধীরে এ রোগ বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। লাম্পি স্কিন আক্রান্ত গবাদি পশু নিয়ে গরু পালনকারীরা এখন দিশেহারা। প্রতিদিন উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসগুলোতে আক্রান্ত গবাদি পশু নিয়ে ভিড় করছেন খামারীরা। আক্রান্ত পশুর মধ্যে বেশিরভাগই গরু।
ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিম্যাল হেলথের অফিস ইন্টারন্যাশনাল ইপোজুটিস’র (ওআইই) তথ্য সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে প্রথম এ রোগ শনাক্ত হয়। সৌদি আরব, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় গরু ও মহিষ। ৬-৯দিনের মধ্যে এ রোগের উম্মেষ ঘটে। ৪-২০ দিনের মধ্যে এ রোগ ভালো হয়। এলাকাভিত্তিক গবাদি পশু আক্রান্তের হার ৫-৪৫ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ।
প্রাণীসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, গত ছয় মাসে শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে দেড় হাজার গবাদি পশু। তবে খামারীরা জানান, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি। মৃত্যুহারও বেড়েছে। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে বাঁশখালীতেই আক্রান্ত গরু মারা গেছে বেশি।
বাঁশখালীর গরু খামারের মালিক চন্দ্র শেখর দাশ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার একটি গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়েছে। গরুটি আমি অন্য গরু থেকে সরিয়ে আলাদাভাবে লালন-পালন করছি। গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর হয়, পরে চার পা ফুলে গেছে। শরীরে গোটা উঠেছে। যা কয়েকদিন পর ফেটে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। বেশি ক্ষত দেখা যাচ্ছে পায়ে। ওষুধেও কাজ করছে না। খামারীরা এমন গরু নিয়ে টেনশনে আছেন। বাঁশখালীতে এ পর্যন্ত অর্ধশত গরু মারা গেছে। আজগর নামে এক খামারির তিনটি গরু মারা গেছে বিরল এ রোগে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, গত এপ্রিল মাসের দিকে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এরপরই ঢাকা থেকে উচ্চপর্যায়ের টিম এসে এ রোগের নমুনা সংগ্রহ করেন। বিদেশি বিশেষজ্ঞও এ রোগ নিয়ে কাজ করেছেন। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে লাম্পি স্ক্রিন রোগ। ওআইই ওয়েবসাইটে অর্ন্তভুক্ত করছে। চট্টগ্রাম থেকে এটি এখন সারাদেশে ছড়িয়েছে। এ রোগে মৃত্যুহার খুব কম। বিচ্ছিন্নভাবে ডেলিভারির সময় চট্টগ্রামে ১-২টি গরু মারা গেছে। একবার ভালো হয়ে গেলে রোগটি সারাজীবন আর হবে না।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে যেকোন একটি এন্টিবায়োটিক দিলে অধিকাংশ সময় ভালো হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত গরু যতœ নিতে হয় বেশি। এ রোগ দ্রুত ভালো হয় না। ১০-১৪দিন পর এ রোগ ভালো হয়। এটা ছোঁয়াছেও না। এ রোগে খামারে রাখা গবাদি পশুই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পিঁপড়া ও মশা-মাছির কামড় থেকেই এ রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৫০০ গরু চট্টগ্রামে লাম্পি স্ক্রিনে আক্রান্ত হয়েছে।
দেশের একমাত্র সরকারি দুগ্ধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘সর্বপ্রথম আমার খামারে গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়। পরে আশপাশের সব খামারে এ রোগ ছড়ায়। আমার খামারে থাকা প্রায় ৭০-৮০টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর দুধ উৎপাদন কমে গেছে। মাংস পঁচে গেছে। এ রোগ নিরাময়ে এখনও কোন সমাধান বের হয়নি। তবে স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে।’
গত ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) লাম্পি স্কিন নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষজ্ঞরা জানান, লাম্পি স্কিন রোগটি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও নেত্রকোনা, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও রোগটিতে মৃত্যুর হার কম, তবে লাইভস্টক শিল্পের অর্থনীতিতে এটি ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এ রোগের উপযুক্ত প্রতিকার বের করা অত্যন্ত জরুরি। সেমিনারে এ রোগের ইতিহাস, কারণ, লক্ষণ, বিস্তৃতি ও প্রতিকারসহ নানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।