চট্টগ্রামে বিশ্বমানের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের যাত্রা শুরু

59

বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের পরিকল্পিত স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে। ফলে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশ হ্রাস পাবে। গতকাল শনিবার সকালে নগরীর পাহাড়তলীতে বিশ্বমানের আধুনিক এবং বহুমুখী বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও ভারতের নারায়াণা হেলথের চেয়ারম্যান ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি এ হাসপাতালটি বাংলাদেশের সঠিক ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবার নতুন সংযোজন বলে উল্লেখ করেন।
ডা. দেবী শেঠী বলেন, ভালো চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যা সবদিক থেকে ক্ষতি। আর আমি একটি মিশন নিয়ে এদেশে এসেছি। আমি চাই না বাংলাদেশিরা চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাক।
তিনি বলেন, আমেরিকার চেয়ে এ উপমহাদেশের চিকিৎসক-নার্সরা অনেক প্রতিভাবান। তারা খুবই পরিশ্রমী। সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। এসময় তিনি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. রবিউল হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে বিপুলসংখ্যক রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে তাদেরকে আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক চাপের মুখে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রাণের উদ্দেশে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ট্রাস্ট একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর ইম্পেরিয়াল-নারায়ণা কার্ডিয়াক সেন্টারটি ডা. দেবী প্রসাদ শেঠীর তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে। ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের চিকিৎসক-নার্সরা এখানে সেবা দেবেন। পুরো সেন্টারটি তারা নিয়ন্ত্রণ করবেন। ইতোমধ্যে সবধরনের যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালটি সাত একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে নার্সেস এবং টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। উন্নতমানের সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা এবং ১৪টি মডিউলার অপারেশন থিয়েটার। রয়েছে ১৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনস্যালটেন্ট রুমের বহির্বিভাগ। বিশ্বমানের ৬৪টি ক্রিটিকাল কেয়ার বেড (আইসিইউ ও সিসিইউ) এ হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। নবজাতকদের জন্য ৪৪ বেডের নিওনেটাল ইউনিট ও ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি সংস্থা এ হাসপাতালের মূল নকশা প্রণয়ন করেছে। একটি ইউরোপিয়ান কনস্যালটেন্ট গ্রæপ এ হাসপাতাল তৈরিতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে। হাসপাতালে রয়েছে হেলিপ্যাড। যে কোনো স্থান থেকে হেলিকপ্টারে করে রোগীকে হাসপাতালে আনা যাবে।
ডা. রবিউল বলেন, এ হাসপাতালে এক ছাদের নিচে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা রয়েছে। যে সেবাটা চট্টগ্রামের অন্য কোনো হাসপাতালে নেই, থাকলেও অপ্রতুল। বিত্তবান, মধ্যবিত্ত ও অস্বচ্ছল থেকে শুরু করে সবধরনের রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাবেন। শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, একজন রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করা পর্যন্ত হসপিটালিটি বিভাগের মাধ্যমে যাবতীয় সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ (ইনফেকশন কন্ট্রোল), রোগীদের নিরাপত্তা এবং কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে এ হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। রোগী ও স্বজনদের জন্য হাসপাতালের পাশে থাকার ব্যবস্থা ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও হাসপাতাল জৈব বর্জ্য অপসারণের জন্য সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সসদ্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এদেশের জনগণ ও রোগীদের পক্ষ থেকে ডা. দেবী প্রসাদ শেঠীকে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং এই হাসপাতাল বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক বলেন, বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎসকদের এই হাসপাতালের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। আমরা এখানে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে চাই। এ লক্ষ্যে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। শুধু মুনাফা অর্জনই নয়, চট্টগ্রাম সহ দেশের স্বাস্থ্যখাতের অভাব ঘুচাতেই আমাদের এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী ও হাসপাতালের সিইও এডলি হ্যানসন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. শফিউল আজম, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহসহ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ প্রমুখ।