চট্টগ্রামে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়লেও বাড়েনি উৎপাদন ‘লো-ডিমান্ড’ এর কবলে পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র

68

চট্টগ্রামে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলেও বাড়েনি বিদ্যুতের উৎপাদন। গত দুই বছরের ব্যবধানে ৩৪৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পিডিবি’র বহরে যুক্ত হলেও উৎপাদন বেড়েছে সামান্য। এরমধ্যে লো-ডিমান্ডের কবলে পড়েছে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।
সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই নির্মিত হয়েছে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট থেকে সিম্পল সাইকেলে এবং ৮ নভেম্বর থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে ২ হাজার ২২ কোটি ৪২ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্লান্টটি। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন।
২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১০০ মেগাওয়াটের জুলধা-থ্রি পাওয়ার প্লান্ট। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড নামের জার্মানির কাটার পিলার কোম্পানির কারিগরি সহায়তায় ১৬শ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু করে ২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার টেকনাফ সোলারটেক। প্রথমবারের মতো দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে টেকনাফের হ্নীলার আলীখালীতে। ১১৬ একর জমিতে জুলস পাওয়ার লিমিটেডের বিনিয়োগে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে টেকনাফ সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (টিসিইএল)।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্মিত তিনটিসহ বর্তমানে ১৬শ ৮১ মেগাওয়াট সক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে চট্টগ্রামে। গত ৯ মার্চ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৬৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। ওইদিন চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১০৪ মেগাওয়াট। তবে দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে নিয়েই চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। এরফলে ‘লো-ডিমান্ড’ (কম চাহিদা)এর কবলে পড়ে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এদিন ১০২ মেগাওয়াট সক্ষমতার দোহাজারি সাংগু পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ১৪ মেগাওয়াট, জুলধা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০ মেগাওয়াট এবং ৫১ মেগাওয়াটের শিকলবাহা এনার্জিস পাওয়ার প্লান্টে উৎপাদিত হয় ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
গত ৮ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৭১৪ মেগাওয়াট। এদিন দোহাজারী পাওয়ার প্লান্টে ৩৪ মেগাওয়াট, জুলধায় ১০ মেগাওয়াট এবং এনার্জিসে ২৫ মেগাওয়াট।
একইভাবে ৭ মার্চ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন হয়েছে ৬৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এদিন দোহাজারী পাওয়ার প্লান্টে ৭৭ মেগাওয়াট, জুলধায় ১২ মেগাওয়াট, এনার্জিসে ২৫ মেগাওয়াট এবং ১০৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার ইসিপিভিএল পাওয়ার প্লান্টে উৎপাদিত হয় ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
৫ মার্চ চট্টগ্রামে উৎপাদিত হয়েছে ৭৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তন্মধ্যে দোহাজারী পাওয়ার প্লান্টে হতে ১৭ মেগাওয়াট, জুলধায় ৫০ মেগাওয়াট, এনার্জিসে ৪০ মেগাওয়াট, ইসিপিভিএল-এ ৪০ মেগাওয়াট এবং হাটহাজারী পাওয়ার প্লান্টে মাত্র ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
অথচ নতুন তিন প্লান্ট হওয়ার আগেও চট্টগ্রামের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে লো-ডিমান্ড ছিল না। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ১৩শ ৩৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার তখনকার ১৪ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছিল ৬৮৯ মেগাওয়াট।
কথা হলে শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) ভূবন বিজয় দত্ত পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের দেশে দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। তবে শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। বোরো মৌসুমের সেচযন্ত্রগুলো চালু হয়ে গেলে কয়েকদিনের মধ্যেই আবারো চাহিদা বেড়ে যাবে। যখন চাহিদা কম থাকে, তখন বেশি খরচের বেসরকারি প্লান্টগুলো থেকে আমরা কম বিদ্যুৎ নিই। এজন্য ‘লো-ডিমান্ড’ দেখানো হয়।’