চট্টগ্রামে বায়ুদূষণ বাড়ছে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে হবে

206

সহনীয় মাত্রার তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে চট্টগ্রামের বায়ুদূষণ। সেই সাথে শব্দ দূষণেও চট্টগ্রামের পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে এ বায়ূদূষণের জন্য- দোষ আরোপ করা হলেও বস্তুত উন্নয়ন কার্যক্রমের শর্তাধির মধ্যেই জনদুর্ভোগ বাড়তে পারে এমন যেকোন বিষয় সতর্কতা অবলম্বনের কথাও কার্যাদেশে উল্লেখ থাকে। কিন্তু ঠিকাদাররা তা মানতে রাজি নয়; ফলে উন্নয়ন বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এর পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত কালো ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া এবং হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহারের কারণেই দূষণের মাত্রা বাড়ায় নগরবাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের যে ভয়াবহ অবস্থা আমরা লক্ষ্য করছি, তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সারা দেশ এ দূষণে আক্রান্ত হবে। সম্প্রতি ঢাকার পরে চট্টগ্রামের বায়ুদূষণ বেশ উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস রোগসহ নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সম্প্রতি একটি ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় প্রচারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বায়ুদূষণের জন্য চলমান উন্নয়ন কাজকে দায়ী করা হলেও তা নিরসনে কোনে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। মাত্র কয়েক মিটার দূরত্বে এমন ধোঁয়াশার কারণ রাস্তার ধূলিকণা। এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের গুরুত্বপূর্ণ এক্সেস রোডের চিত্র। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াও কষ্টকর এই এলাকায়। বিবর্ণ রাস্তার পাশের সব গাছপালা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এরমধ্যেই রাস্তায় বেরুতে হচ্ছে লোকজনকে। ফলে নানা রকম রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এই আধাকিলোমিটারের মধ্যে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকদের মতে, এদের বেশিরভাগই ধুলাবালি জনিত কারণে আক্রান্ত। কেবল আগ্রাবাদ নয়, বহদ্দারহাট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, বাকলিয়াসহ পুরো নগরীতেই এখন একই অবস্থা। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নগরীতে বায়ু দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তবে নগরীতে বায়ুদূষণের জন্য চলমান উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেন সিটি মেয়র। নগরীর বিভিন্ন সড়কে সিডিএ, ওয়াসাসহ নানা সেবাপ্রতিষ্ঠানের চলছে এই উন্নয়ন কাজ।
অভিযোগ রয়েছে যে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতর পাহাড়কাটা, জলাশয় ভরাট, নিষিদ্ধ পলিথিন আটকসহ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করলেও বায়ু দূষণ বিরোধী অভিযান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অন্যদিকে অভিযানে দায়ের করা মামলার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় পরিবেশ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম পরিবেশ আদালত সূত্র জানায়, পরিবেশ আদালতে বর্তমানে তিন শতাধিক মামলা বিচারাধীন। অধিকাংশ মামলার তদন্ত রিপোর্ট এখনও আদালতে পৌঁছেনি।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগরীর একে খান মোড়, সিটি গেট, জিইসি মোড়, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকার বাতাস পরীক্ষা করে পরিবেশ অধিদফতর দেখতে পায়, এসব এলাকার বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট মেটার বা এসপিএম) পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি। বাতাসে এসপিএমের সহনীয় মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে একে খান মোড়ে এর পরিমাণ ৪২০ মাইক্রোগ্রাম, সিটি গেটে ৪৪০ মাইক্রোগ্রাম, বিআরটিসি মোড়ে ৪৩৫ মাইক্রোগ্রাম, আগ্রাবাদে ৩৯৫ মাইক্রোগ্রাম, ষোলশহরে ৪০৬ মাইক্রোগ্রাম ও টাইগার পাস মোড়ে ৪২৬ মাইক্রোগ্রাম। বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে শব্দ দূষণের মাত্রাও সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পরিবেশ আইন অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিল্প এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা ৭৫ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবল, আর মিশ্র এলাকায় ৬০ ডেসিবল। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা যায়, নগরীর খুলশী (আবাসিক) এলাকায় শব্দের মাত্রা ছিল ১০৬ ডেসিবল, ইস্পাহানি মোড়ে ১১০ ডেসিবল, একে খান গেট (শিল্প) এলাকায় ১৩৫ ডেসিবল, পাহাড়তলী এলাকায় ১৫৫ ডেসিবল।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মতে, দেশে বায়ুদূষণ প্রতিনিয়তেই বাড়ছে, কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। মূলত পরিবেশ অধিদপ্তরের আন্তরিক কর্মতৎপরতার উপর এ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা নির্ভর। একইভাবে সরকারের উন্নযন প্রকল্প বা নগর কর্তৃপক্ষের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। জনসচেতনতাও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ বিষয়ে তাদের মনোযোগ আরো বৃদ্ধি করবে।