চট্টগ্রামে চার লাখ ছাড়িয়েছে পিডিবির প্রি-পেইড মিটারিং

73

চট্টগ্রামে চার লাখ ছাড়িয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর প্রি-পেইড মিটারিং। দুই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলের একটি প্রকল্প থেকে আনা এক লাখ মিটারও ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে সংযোজন শেষ হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার কমেছে, বেড়েছে পিডিবির আয় ।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ মার্চ চীনা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সাথে ‘প্রি-পেইড মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন জোন’ শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি করে পিডিবি। প্রথম পর্যায়ের ১৩৭ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে ১ লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনা হয়। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো দেড় লাখ মিটার সংযোজন করা হয়। দ্বিতীয় প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করেন চায়না হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানি। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কালে বৃহত্তর রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া প্রি-পেইড মিটারিং প্রকল্প থেকে আসা এক লাখ মিটারও নগরীতে সংযোজন করা হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে আরেক চায়নিজ প্রতিষ্ঠান ইনহেমিটার কোম্পানি লিমিটেড।
তাছাড়া নগরীতে নতুন সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজারের অধিক নতুন প্রি-পেইড মিটার সংযোজন করে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল পিডিবি। ইতোমধ্যে নগরীর আগ্রাবাদ, খুলশী, স্টেডিয়াম, রামপুর, মাদারবাড়ি, মোহরা, বাকলিয়া, ষোলশহর, বিবিরহাট, হালিশহর বিতরণ বিভাগসহ ১০ বিতরণ বিভাগে সবমিলিয়ে চার লাখের অধিক গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মহানগরীর ১০ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে পিডিবি।
পিডিবি কর্মকর্তারা জানান, শতভাগ রাজস্ব আদায়, সিস্টেম লস হ্রাস, চুরি রোধ এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে পিডিবি প্রি-পেইড মিটারিং প্রকল্প চালু করে। প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের পর গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে পিডিবিও লাভবান হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের অপচয় রোধ হয়েছে। ভুয়া বিল ও বকেয়া বিলের পরিমাণ একেবারে কমে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিলের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে আগের মতো সার্ভিস চার্জ নেওয়া হলেও নতুন করে মাসে ৪০ টাকা মিটার ভাড়া কাটা হচ্ছে। কারণ হিসেবে পিডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন সংযোজিত প্রি-পেইড মিটারগুলোর প্রত্যেকটির মূল্য ৫ হাজার ২০০ টাকা। মিটারের এ মূল্য গ্রাহকদের কাছ থেকে সরাসরি নেওয়া হয়নি। ব্যবহারের জন্য কেনা প্রি-পেইড কার্ড থেকে মাসে একবার করে ‘মিটার ভাড়া’ হিসেবে কর্তন করা হচ্ছে।
প্রি-পেইড মিটারিং প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক ও পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘দুই পর্যায়ে চট্টগ্রামে প্রি-পেইড মিটার সংযোজন করা হয়েছে। পুরোনো মিটার ব্যবহারকারীদেরকেও প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার জন্য পিডিবি থেকে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।’
বৃহত্তর রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলে প্রি পেইড মিটারিং প্রকল্পে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ৯ লাখ প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তন্মধ্যে সাড়ে চার লাখ স্থাপন করে চায়না হেক্সিং ও সাড়ে চার লাখ স্থাপন করেন আরেক চায়না প্রতিষ্ঠান ইনহেমিটার কোম্পানি। প্রাথমিকভাবে বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে প্রি-পেইড মিটারিংয়ের বিষয়ে অনাগ্রহ দেখানোর কারণে ওই প্রকল্পের এক লাখের কিছু বেশি মিটার চট্টগ্রামে সংযোজন করা হয়। আমার জানা মতে, চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে চার লাখের বেশি প্রি-পেইড মিটার সংযোজন করা হয়েছে।
পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর কুমার সেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে চার লাখ প্রি-পেইড মিটার সংযোজন করা হয়েছে। এতে বিদ্যুতের সাশ্রয় হচ্ছে। আবার পিডিবির আয়ও বেড়েছে। কারণ আগে এক কিলোওয়াট ব্যবহারের কথা বলে দুই-তিন কিলোওয়াটও ব্যবহার করতো। এখন প্রি-পেইড মিটারে দুই কিলোওয়াট ব্যবহার করলেও মাসিক চার্জ দিতে হয়। ফলে এখাত থেকে সরকারের রাজস্বও বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ১০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। দুই প্রকল্পে দুই লাখ ৮৯ হাজার প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের পর যখন জানতে পারি রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলের জন্য আনা মিটারগুলোর প্রতিস্থাপন বিলম্বিত হচ্ছে, তখন প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে এক লাখ মিটার চট্টগ্রামে নিয়ে আসি। ওই মিটারগুলোও ইতোমধ্যে প্রতিস্থাপন করা শেষ হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সারাদেশে আগে থেকেই বিদ্যুৎ চুরিসহ ব্যবহারে নানা ধরণের অনিয়ম চলে আসছিল। ভুতুড়ে বিল দেওয়া, মিটার রিডিং ছাড়াই বিল দেওয়া, মিটার ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ চুরি, বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পিডিবির অসৎ কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজের মাধ্যমে কমিয়ে বিল পরিশোধের কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এসব অনিয়ম ঠেকাতে প্রি-পেইড মিটারিংয়ের মাধ্যমে বিল আদায়ের প্রকল্প নেয় সরকার।